নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: আজ বিশ্ব নদী দিবস। নদী রক্ষায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে। দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে নদী রক্ষায় সচেতন করা। মানুষকে জানানো, নদী হচ্ছে পৃথিবীর ধমনীর মতো। এর প্রবাহমনতাই সত্যিকার অর্থে আমাদের জীবন রক্ষাকারী। এবারে দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘মানুষের জন্য নদী’।

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। আমাদের দেশে নদী ও মানুষের জীবন অবিচ্ছেদ্য। সে কারণেই আমাদের মৃতপ্রায় নদী নিয়ে পরিবেশবাদীসহ সাধারণ মানুষের উদ্বেগ লক্ষ্য করা যায়। যদিও নদী রক্ষার তৎপরতা গোটা পৃথিবী জুড়েই দেখা যায়। নদী সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রবিবার পালন করা হচ্ছে বিশ্ব নদী দিবস।

ঢাকাকে ঘিরে থাকা চারটির মধ্যে তিনটি নদীতেই প্রাণ ফেরানো সম্ভব। এজন্য দরকার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সদিচ্ছা। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ এবং ধলেশ্বরীর উৎপত্তিস্থল ও মোহনাতে এখনও পানির প্রবাহ বাড়ানো সম্ভব। তবে বালু নদীতে পানির প্রবাহ তৈরি করা কঠিন হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।

বালু নদী

গাজীপুরের পারুলি খাল আর টাঙ্গাইলের সুতি নদীর মিলিত স্রোতধারা থেকে বালু নদীর উৎপত্তি। এরমধ্যে পারুলি খাল বছরের বেশিরভাগ সময় পানিশূন্য থাকে। এর দৈর্ঘ্য ২৩ কিলোমিটার। সুতি নদীর দৈর্ঘ্য ৩৬ কিলোমিটার। পুরনো ব্রহ্মপুত্র থেকে উৎপত্তি হওয়া সুতি নদী ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অক্টোবর থেকে জুন পর্যন্ত এতে পানি থাকলেও বছরের অন্য সময় শুকিয়ে যায়। ফলে উজান থেকে বালু নদীতে পানির প্রবাহ সৃষ্টি করা কঠিন।

বুড়িগঙ্গা

ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ দিয়ে ২৯ কিলোমিটারের প্রবাহিত স্রোতধারাটি বুড়িগঙ্গা। এর উৎপত্তি স্থল এবং মোহনা ধলেশ্বরী নদীতে। ধলেশ্বরীর উৎস যমুনা আর মোহনা হচ্ছে মেঘনা। ধলেশ্বরীতে সারাবছরই পানির প্রবাহ থাকে। যে কারণে বুড়িগঙ্গাও শুকায় না।

বর্ষায় পানির প্রবাহ বেশি থাকে। তখন বুড়িগঙ্গার পানি কিছুটা পরিষ্কার দেখা গেলেও গ্রীষ্মে এর উল্টোচিত্র। বছরের অধিকাংশ সময় পানির রঙ থাকে কালো। যার প্রধান কারণ নদীর তীরবর্তী শিল্পকারখানা দূষণ ও বাসাবাড়ির আবর্জনা।

অন্যদিকে, ধলেশ্বরীর উৎস যমুনায় ড্রেজিং করে এতে প্রবাহ বাড়ানো গেলে বুড়িগঙ্গাতেও প্রবাহ বাড়বে। এর আগে এই ধরনের একটি প্রকল্পের কথা আলোচনা হলেও বিপুল ব্যয়ের কারণে ওই চিন্তা বাতিল করা হয়।

তুরাগ

৬২ কিলোমিটারের নদীটি ঢাকা ও গাজীপুর দিয়ে প্রবাহিত। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, এই নদীর গভীরতা ছিল ১৩ দশমিক ৫ মিটার। এর উৎসে আছে বংশী নদী। যা জামালপুর, টাঙ্গাইল, গাজীপুর হয়ে ঢাকায় এসে তুরাগে মিশেছে। বংশীর উৎপত্তিস্থল পুরনো ব্রহ্মপুত্রে। সেখানে পানির প্রবাহ আছে। এতে বংশীর পানি প্রবাহ বাড়িয়ে তুরাগকে সচল রাখা সম্ভব।

ধলেশ্বরী

ধলেশ্বরীর উৎস যমুনা। এর মোহনা পড়েছে মেঘনা। ফলে এই নদীতেও পানির প্রবাহ তৈরি সম্ভব। ৬২ কিলোমিটার লম্বা এই নদীর পানির প্রবাহ বাড়ানো গেলে প্রাণ ফিরবে ঢাকায় আশেপাশের নদীগুলোতেও।

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

এ বিষয়ে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, বর্ষায় পানি বেড়ে প্রবাহ বাড়বে। এটা প্রাকৃতিক। কিন্তু আমাদেরও কিছু করার আছে। দূষণ বন্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ দরকার। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে জনবল বাড়াতে হবে। কার্যকর প্রকল্প বাস্তবায়নে আরও মনোযোগী হতে হবে।

এ বিষয়ে বাপার সহসভাপতি ডা. মো. আব্দুল মতিন বলেন, ঢাকার আশেপাশের নদীগুলোর প্রবাহ বাড়াতে প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে বসে থাকলে চলবে না। সরকারের যতটা আইনের কঠোর প্রয়োগ করার কথা, ততটা করছে না। আমরা পরিবেশবাদীরা সেসব সুপারিশ করছি তাও সরকার দেখছে না।

আরো পড়ুন:

সাগর ও ভূমি রক্ষায় ১০০ কোটি ডলার দিলেন জেফ বেজোস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *