নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: “অতীত নিশি গেছে চলে/চিরবিদায় বার্তা বলে/কোন আঁধারের গভীর তলে/রেখে স্মৃতিলেখা/এসো এসো ওগো নবীন/চলে গেছে জীর্ণ মলিন/আজকে তুমি মৃত্যুবিহীন/মুক্ত সীমারেখা।”
আজ ৩০ চৈত্র, মঙ্গলবার। বাংলা বছরের শেষ দিন। চৈত্র মাসের এই দিনটিকে বলা হয় চৈত্রসংক্রান্তি। বাংলার বিশেষ লোকজ উৎসব এই চৈত্রসংক্রান্তি। আবহমান বাংলার চিরায়িত নানা ঐতিহ্যকে ধারণ করে আসে এ দিনটি। বছরের শেষ দিন হিসেবে পুরনোকে বিদায় ও নতুন বর্ষকে বরণ করার জন্য চৈত্রসংক্রান্তিকে ঘিরে থাকে নানা অনুষ্ঠান-উৎসবের আয়োজন।
আবার এটি বাংলা বর্ষ ও বসন্ত ঋতুর শেষ দিনও। জীর্ণ পুরাতন সবকিছু ভেসে যাক, ‘মুছে যাক গ্লানি’ এভাবে আজকের বিদায়ী সূর্যের কাছে এই আহ্বান জানাবে বাঙালি। আগামীকাল বুধবার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখ। ঋতুচক্রের পালাবদলে আগামীকাল নতুন আশা নিয়ে শুরু হবে ১৪২৮ বঙ্গাব্দ।
করোনাভাইরাসের কারণে দেশ স্থবির থাকলেও প্রকৃতির অমোঘ নিয়মেই আজ বিদায় নিচ্ছে ১৪২৭ বঙ্গাব্দ। চৈত্রসংক্রান্তির এই দিনটিতে স্মৃতির ঘরে ঠাঁই নেবে বিদায়ী বছরের আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্না, ঘটনা কিংবা দুর্ঘটনা। নতুন বছরকে স্বাগত এবং পুরোনো বছরকে বিদায় জানানোর জন্য আবহমান কাল ধরে চৈত্রের শেষ দিনে নানা আচার-অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়ে থাকে। তবে বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে এবারও তেমন কোনো আয়োজন নেই।
অথচ বাঙালির সর্বজনীন উৎসবের দিন ছিল এটি। সনাতন ধর্মের অনুসারীরা এই চৈত্রসংক্রান্তিকে গ্রহণ করেন পুণ্যের দিন হিসেবে। তারা তাদের শাস্ত্র ও লোকাচার অনুসারে এদিনের স্নান, দান, ব্রত, উপবাস প্রভৃতি ক্রিয়াকর্মকে পুণ্যের কাজ মনে করেন।
চৈত্রসংক্রান্তির এই দিনটি প্রতিবছর রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালন করে থাকে। মেলা, ঘুড়ি উৎসব, রকমারি সব ঘুড়ির প্রদর্শনী, গ্রামবাংলার জনপ্রিয় লাঠিখেলা, পুঁথিপাঠ, পুতুলনাট্য, পালাগান, গম্ভীরা ও রায়বেশের মতো লোকসংস্কৃতির নানা আয়োজন থাকে।
চৈত্রসংক্রান্তির সবচেয়ে বড় আয়োজন চড়ক পূজা। চৈত্র মাসজুড়ে সন্ন্যাসীরা উপবাস, ভিক্ষান্নভোজন প্রভৃতি নিয়ম পালন করেন। সংক্রান্তির দিন তারা শূলফোঁড়া, বাণফোঁড়া ও বড়শিগাঁথা অবস্থায় চড়কগাছে ঝোলে। আগুনের ওপর দিয়ে হাঁটে। শারীরিক কসরত দেখতে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ এসে জড়ো হয় চড়কমেলা-গাজনের মেলায়। মেলার সঙ্গে বিভিন্ন হিন্দু পৌরাণিক ও লৌকিক দেবতার নাম সম্পৃক্ত। যেমন- শিবের গাজন, ধর্মের গাজন, নীলের গাজন ইত্যাদি। এদিকে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে চলতি বছরের পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। এবার বাংলা বর্ষবরণ হবে প্রতীকী, আয়োজন নেই সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর। রয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাও।