আইপিএলে নাটকীয় হারে প্লে-অফ স্বপ্ন ভেঙে কলকাতার বিদায়
গতকাল জিতলে টিকে থাকত প্লে-অফ স্বপ্ন কিন্তু আইপিএলে নাটকীয় হারে প্লে-অফ স্বপ্ন ভেঙে কলকাতার বিদায়। রোমাঞ্চের ম্যাচে শেষ ওভারে জয় প্রায় ছিনিয়েই এনেছিলেন রিঙ্কু ও নারাইন। কিন্তু বাদ সাধলেন এভিন লুইস। অবিশ্বাস্য ক্যাচ ও শেষ দুই বলে মার্কাস স্টয়নিসের ২ উইকেটে ২ রানের রোমাঞ্চকর জয় পেয়েছে লখনৌ সুপার জায়ান্ট।
আইপিএলের ৬৬তম ম্যাচে বুধবার (১৯ মে) শেষ ওভারের নাটকীয়তায় কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে ২ রানের জয় পেয়েছে লখনৌ সুপার জায়ান্ট। লখনৌর দেওয়া ২১১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ২০৮ রানে থেমেছে কলকাতা। এই জয়ে প্লে-অফ নিশ্চিত করেছে লোকেশ রাহুলের দল।
মুম্বাইয়ের ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে রানবন্যার ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় লখনৌ। অধিনায়কের সিদ্ধান্তের যথার্থতা প্রমাণ করে ব্যাট হাতে এদিন ঝড় তোলেন কুইন্টন ডি কক। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন অধিনায়ক লোকেশ রাহুল স্বয়ং। এদিন অবিচ্ছেদ্য ওপেনিং জুটিতে লখনৌ সংগ্রহ করে ২১০ রান। আইপিএল ইতিহাসে এটাই সর্বোচ্চ রানের উদ্বোধনী জুটি।
লখনৌর পক্ষে ঝড় তোলা কুইন্টন ডি কক মাত্র ৭০ বলে ১৪০ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেন। ১০টি করে চার ও ছয়ে তিনি তার ইনিংস সাজান। তার ওপেনিং সঙ্গী লোকেশ রাহুল ৫১ বলে করেন ৬৮ রান। তার ইনিংসে ছিল ৩টি চার ও ৪টি ছয়।
২১১ রানের লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে নামা কলকাতা লখনৌর পেসার মহসিন খানের তোপে মাত্র ৯ রানেই হারিয়ে ফেলে দুই উইকেট। তবে এরপর তারা ঘুরে দাঁড়ায় নিতীশ রানা ও অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ারের ব্যাটে। মাত্র ২৭ বলে ৫৬ রানের জুটি গড়েন দুজনে। কিন্তু দলীয় ৬৫ রানে নিতীশ রানার বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। গৌতমের বলে আউট হওয়ার আগে ২২ বলে ৯ চারের মারে ৪২ রান করেন নিতীশ।
নিতীশের বিদায়ের পর স্যাম বিলিংসকে নিয়ে ৬৫ রানের জুটি গড়েন শ্রেয়াস। এদিন অর্ধশতকের দেখা পাওয়া কলকাতা অধিনায়ক সাজঘরে ফেরেন ঠিক ৫০ রান করেই। ২৯ বলে ৪ চার ও ৩ ছয়ে এই রান করেন তিনি। ২৪ বলে ২ চার ও ৩ ছয়ে ৩৬ রান।
এরপর দ্রুতই ফিরে যান ইনফর্ম আন্দ্রে রাসেল। তবে কলকাতার হয়ে গোটা টুর্নামেন্টে তেমন কিছু করতে না পারলেও শেষের দিকে এসে এদিন ঝড় তোলেন রিঙ্কু সিং। তার সঙ্গী হন ক্যারিবিয়ান রহস্যময় বোলার সুনিল নারাইন। দুজন মিলে ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালিয়ে অসম্ভব লক্ষ্যকে তাড়া করেন। ক্রিজে এসেই ছক্কা মারেন নারাইন।
শেষ ২০ বলে জয়ের জন্য কলকাতার প্রয়োজন ছিল ৬১ রান। সেখান থেকে ১৮তম ওভারে আভেশ খানের ৬ বলে ১৭ রান তোলেন রিঙ্কু ও নারাইন। সমীকরণ দাঁড়ায় ১২ বলে ৩৮।
১৯তম ওভারে আসে আরও ১৭ রান। হোল্ডারের সে ওভারে প্রথম তিন বলে একটি করে ছক্কা হাঁকান দুই ব্যাটার। শেষ ওভারে জয়ের জন্য লক্ষ্য দাঁড়ায় ২১।
শেষ ওভার বল করতে আসেন তখন পর্যন্ত এক ওভার বল করে ৫ রান দেওয়া মার্কাস স্টয়নিস। তার ওভারের প্রথম বলেই এক্সট্রা-কাভার দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকান রিঙ্কু। পরের বলেই আবার পুল করে হাঁকান ছক্কা!
তৃতীয় বলে ইয়োর্কার দিতে গিয়ে স্লটে বল দিয়ে লং অফে ছক্কা খান স্টয়নিস। চতুর্থ বলে রিঙ্কু ডাবল নিয়ে ম্যাচ কলকাতার মুঠোয় নিয়ে আসেন। ২ বলে দরকার ৩ রান।
কিন্তু রিঙ্কু ভুল করে বসেন। অফ স্টাম্পের বাইরের বল এক্সট্রা কাভারের উপর দিয়ে খেলতে গিয়ে টাইমিংয়ের হেরফেরে ক্যাচ দিয়ে বসেন রিঙ্কু। ডিপ পয়েন্টে ফিল্ডিং করা এভিন লুইস অনেকটা দৌড়ে এসে বাঁ দিকে ডাইভ দিয়ে এক হাতে ক্যাচ নেন। ক্রিকেটের অসাধারণ ক্যাচের তালিকায় উপরের দিকেই থাকবে এই অসাধারণ ক্যাচটি।
শেষ বলে জয়ের জন্য দরকার তিন রান। কিন্তু স্টয়নিসের ইয়োর্কারে ছত্রখান উমেশ যাদবের স্ট্যাম্প। ২ রানের হারে কলকাতার খেলোয়াড়-সমর্থকরা তখন নির্বাক।
১০ দলের টুর্নামেন্টে সবার আগে প্লে-অফ নিশ্চিত করেছিল নতুন দল গুজরাট। দ্বিতীয় দল হিসেবেও প্লে-অফ নিশ্চিত করল আরেক নতুন দল লখনৌ। বাকি দুই জায়গার একটি কোন অঘটন না ঘটলে রাজস্থানেরই হবে। বাকি জায়গাটির জন্য লড়াই করছে দিল্লি, বেঙ্গালুরু ও পাঞ্জাব। গাণিতিক হিসেবে ক্ষীণ সম্ভাবনা আছে হায়দরাবাদেরও।
চেন্নাই ও মুম্বাইয়ের পর তৃতীয় দল হিসেবে বাদ পড়ল কলকাতা।