আইন আদালতশিক্ষা ও সাহিত্য

আইন লঙ্ঘনের কারনে ২৫ বিশ্ববিদ্যালয়কে ইউজিসির শোকজ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: আইন লঙ্ঘন করে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ২৫ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে শোকজ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ভাড়া বাড়িতেই এসব প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর কার্যক্রম চালাচ্ছে। ২০১০ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সরকার কয়েক দফা আলটিমেটাম দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি এ শোকজ (কারণ দর্শানোর) নোটিশ পাঠানো হয়।

ইউজিসি সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, আইন অনুযায়ী একটি বিশ্ববিদ্যালয় সর্বোচ্চ ১২ বছর সময় পেয়ে থাকে। এর মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করতে হবে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় তা পারেনি, সেগুলোর কর্তৃপক্ষের কাছে বক্তব্য চাওয়া হয়েছে। এখন পরিস্থিতি এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রোফাইল পর্যালোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘন এবং সনদ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ ও প্রমাণ থাকে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়ার মতো প্রস্তাব আসতে পারে।

দেশে ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমতি দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে বর্তমানে চালু আছে ৯৯টি। ১৯৯২ সালে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ শুরু হয়। ২০১০ সালের আগে ৫২টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। এরমধ্যে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চ আদালতে মামলার রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে সরকার বন্ধ করে দেয়। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, অবশিষ্ট ৫১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬টি স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরু করেছে। বাকি ২৫ প্রতিষ্ঠানের কোনোটি আংশিক ক্যাম্পাস নির্মাণ করেছে। কিছু প্রতিষ্ঠান জমি কিনেছে। আবার কিছু কোনো ধরনেরই পদক্ষেপ নেয়নি। স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে ২০১০ সালের পর থেকে সরকার এসব প্রতিষ্ঠানকে কয়েক দফা আলটিমেটাম দিয়েছে। সর্বশেষ দেওয়া আলটিমেটামে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় বেঁধে দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তখন বলা হয়েছিল-যেসব বিশ্ববিদ্যালয় এ নির্দেশ পালন করতে পারবে না তাদের ভর্তি বন্ধ করে দেওয়া হবে। সে অনুযায়ী ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ছাত্রছাত্রী ভর্তি বন্ধ থাকার কথা ছিল।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এরমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে পরিবর্তন আসে। বারবার আলটিমেটাম দেওয়ার পরও তা প্রতিপালনে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে এতদিন মন্ত্রণালয় রহস্যজনক কারণে ‘নিশ্চুপ’ ছিল। এমনকি এ সংক্রান্ত মিটিং পর্যন্ত হয়নি। যদিও এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন বিভাগ ও অনুষদ খোলার অনুমোদন বন্ধ এবং সমাবর্তন আয়োজনের অনুমতি স্থগিত থাকার কথা। সেই অবস্থান থেকেও সরে আসা হয়েছে। অবশেষে চার বছরে এই প্রথম ‘শোকজ’র মতো ব্যবস্থা নেওয়া হলো।

ইউজিসির তথ্য অনুযায়ী, স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইউএসটিসি, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সেন্ট্রাল উইমেনস ইউনিভার্সিটি, আইইউবিএটি, আইআইইউসি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, লিডিং ইউনিভার্সিটি, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, এআইইউবি, এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটি, গণবিশ্ববিদ্যালয়, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটি, সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, বিইউবিটি, ইউল্যাব ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি। তবে এগুলোর মধ্যে কোনোটির বিরুদ্ধে সনদ বাণিজ্য আবার কোনোটির বিরুদ্ধে অননুমেদিত ক্যাম্পাস ও প্রোগ্রাম পরিচালনার অভিযোগ আছে। এ সংক্রান্ত তথ্য ইউজিসি ওয়েবসাইটে (www.ugc.gov.bd) প্রকাশ করেছে।

এদিকে ২০১০ সালে সরকার নতুন আইন তৈরি করে। এর অধীনে স্থাপিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২৮টির ইতোমধ্যে ৭ বছর পার হয়েছে। তবে এগুলোর মধ্যে চারটি স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এগুলো হচ্ছে, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি, হামদর্দ ইউনিভার্সিটি, নটরডেম ইউনিভার্সিটি এবং জেডএইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। তবে এগুলোর মধ্যে একটির বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ক্যাম্পাস ও প্রোগ্রাম পরিচালনার অভিযোগ আছে।

ইউজিসি পরিচালক (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) ওমর ফারুখ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতির পর অস্থায়ী ক্যাম্পাসে অবস্থানের মেয়াদ ৭ বছর। তবে এরপরও সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান আরও ৫ বছর থাকতে পারে। সে হিসাবে ১২ বছর পর্যন্ত অস্থায়ী ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ আছে। পুরানো ৫১টিসহ যে ৭৯টির সবমিলে ১২ বছর পূর্ণ হয়েছে, সেগুলোকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ১২ বছরের বেশি বয়সিগুলোর মধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠান স্থায়ী ক্যাম্পাসে যায়নি এখন সেগুলোকে শোকজ করা হয়েছে। আর যেগুলোর বয়স ১২ হয়নি সেসব প্রতিষ্ঠান মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনের সুযোগ পাচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি আবেদন করেছে।

সূত্র জানিয়েছে, ইউজিসি যে শোকজ করেছে তাতে ৯নং ধারা লঙ্ঘনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই ধারায় অখণ্ড ও নিষ্কণ্টক জমিতে ক্যাম্পাস নির্মাণসহ ৭টি বিষয়ে উপধারা আছে। জানা গেছে, শোকজ দেওয়া ২৫ বিশ্ববিদ্যালয়র কোনোটিকে ৩ দিন আবার কোনোটিকে ৫ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। শোকজে যেসব প্রতিষ্ঠান স্থায়ী ক্যাম্পাসে গিয়ে আগের ঠিকানায় (অস্থায়ী) নানা নামে ক্যাম্পাস ধরে রেখেছে সেগুলোর বিষয়ও উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলোর একটি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। আরেকটি প্রতিষ্ঠান ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। বিশ্ববিদ্যালয়টিও আশুলিয়ায় নিজস্ব ক্যাম্পাস নির্মাণ করলেও রাজধানীর শুক্রবাদে একাধিক ক্যাম্পাস আছে প্রতিষ্ঠানটির।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, চট্টগ্রামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আইনের ৯(১) অনুযায়ী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস হবে অখণ্ড, নিষ্কণ্টক এবং দায়মুক্ত জমিতে। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানের একাধিক ক্যাম্পাস আছে। এর সব ক্যাম্পাসকেই স্থায়ীর মর্যাদা দিতে ইউজিসির ওপর চাপ আছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনার সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যালোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপরি স্থায়ী ক্যাম্পাসে গেছে। কিছু আংশিক গেছে। স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া ও ক্যাম্পাস নির্মাণের কোনো উদ্যোগ না নেওয়া প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে কিছু একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শোকজের জবাব এলে তা নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আরো পড়ুন:

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মোপযোগী শিক্ষা দেওয়া হবে: শিক্ষামন্ত্রী

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *