স্বাস্থ্য

অ্যাম্বুলেন্সের মান নিশ্চিত করতে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: দেশের সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অ্যাম্বুলেন্সের মান নিশ্চিত করার কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অভিযোগ উঠেছে, দেশের অ্যাম্বুলেন্স সেবা সরকারি নিয়ন্ত্রণে নেই। দেশে অ্যাম্বুলেন্স পরিচালনায় নেই কোনো নীতিমালা। এ সুযোগে আধুনিক চিকিৎসা উপকরণ ছাড়াই শত শত মানহীন অ্যাম্বুলেন্স রাস্তায় নামছে। মাঝপথে রোগীকে ন্যূনতম সেবা প্রদানের ব্যবস্থাও থাকে না অনেক মানহীন অ্যাম্বুলেন্সে। করোনার মহামারীতে অ্যাম্বুলেন্সের চাহিদা বহুগুণ বেড়ে যাওয়ায় মানহীন অ্যাম্বুলেন্সের বিষয়টি  বেশি মাত্রায় আলোচনায় চলে এসেছে।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যাম্বুলেন্স বিষয়ে  সাধারণ মানুষের অনভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে  অবাধে চলছে  রমরমা অ্যাম্বুলেন্স বাণিজ্য। অথচ আধুনিক চিকিৎসা উপকরণে সমৃদ্ধ একটি অ্যাম্বুলেন্সে রোগী বহনকালেও চিকিৎসাসেবা দেয়া যায়। এতে রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকটা কমে আসে। কিন্তু দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিকে ব্যবহৃত সরকারি বা বেসরকারি বেশির ভাগ অ্যাম্বুলেন্সেই  এসব সুবিধা নেই। ফলে হাসপাতালে আনার সময় মারা যায় অনেক রোগী। রোগীকে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেন অ্যাম্বুলেন্স মালিকরা। করোনা মহামারীতে এই অসাধু ব্যবসা বহুগুণ বেড়েছে।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা জানান, অ্যাম্বুলেন্স কখনো প্রাইভেট কার বা যাত্রীবাহী গাড়ি হতে পারে না। অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে রোগীর একটা যোগসূত্র রয়েছে। চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত রোগীকে সাময়িক কিছু চিকিৎসাসেবা দেয়ার দায়িত্বও অ্যাম্বুলেন্সের ওপর বর্তায়। আর অ্যাম্বুলেন্স মানে শুধু সুন্দর গাড়ি (কার) হলেই চলবে না। এখানে থাকবে আইসিইউ’র  প্রয়োজনীয় সব চিকিৎসা উপকরণ । প্রশিক্ষিত ডাক্তার, নার্স ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধও থাকতে হবে। আর এসব সুবিধা থাকলেই একজন মুমূর্ষু রোগীকে হাসপাতালে আনার সময় পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। এ দেশে জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়েই এখন পর্যন্ত কোনো নীতিমালা নেই। অর এটা না থাকায় অ্যাম্বুলেন্স পরিচালনায় কোনো নীতিমালা হচ্ছে না। অ্যাম্বুলেন্সে ব্যবসায়ীদের কাছে মানুষের জীবনের চেয়ে টাকাই মূখ্য হয়ে ওঠে। এ সুযোগে এখন রেন্ট এ কারের মতোই অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবসা চলছে।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি অ্যান্ড ক্যাজুয়ালটি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. এইচ এ নাজমুল হাকিম ধূমকেতু ডটকমকে জানান, অনেক সময় রোগীকে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নেয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। হাসপাতাল ও রোগীর অবস্থানের দূরত্ব বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সেক্ষেত্রে ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল সার্ভিসের মধ্যে আগে হচ্ছে প্রি-হসপিটাল কেয়ার। এরপর হসপিটাল কেয়ার। রোগীকে হাসপাতালে প্রবেশ করানোর আগের চিকিৎসাটুকু খুবই জরুরি। এটার অভাবে বছরে অনেক লোকের মৃত্যু ঘটে। তিনি আরো বলেন, একটি অ্যাম্বুলেন্সে ভেনটিলেটর, অক্সিজেন, কার্ডিয়াক মনিটর, ইমার্জেন্সি ড্রাগসহ অন্যান্য জীবনরক্ষাকারী উপকরণসহ আইসিইউ (ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট) থাকা জরুরি। কিন্তু দেশের কিছু অ্যাম্বুলেন্সে এসব সুবিধা  থাকলেও বেশির ভাগ অ্যাম্বুলেন্সেই নেই বলে জানান ডা: এইচ এ নাজমুল হাকিম।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক  অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম ধূমকেতু ডটকমকে  জানান, আধুনিক চিকিৎসা উপকরণ না থাকলে অ্যাম্বুলেন্স হতে পারে না। কিছু চক্র গোপনে নকল অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের ব্যবসার কাজে ব্যবহৃত নকল অ্যাম্বুলেন্সগুলো সাধারণত হাসপাতাল থেকে দূরত্ব বজায় রেখে অবস্থান করে। রোগী ও রোগীর লোকজন সচেতনতা থাকলেই  এমন চক্রের হাত থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। অনেক করোনা রোগীর শ্বাসকষ্টসহ নানা জটিলতা দেখা দেয়।অ্যাম্বুলেন্সে আধুনিক সুযোগ সুবিধা থাকলে হাসপাতালে নেওয়ার পথে রোগীকে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করা যায়। অবৈধ  ও মানহীন অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অভিযান টিম কাজ করছে বলে জানান মহাপরিচালক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *