অ্যাভোকাডোর আশ্চর্যজনক গুণ                               

অ্যাভোকাডো, একটি অবিশ্বাস্য পুষ্টিগুন সম্পন্ন ফল অ্যাভোকাডো। স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিদের কাছে এর গ্রহনযোগ্যতা ব্যাপক। এটি মূলত মেক্সিকো ও মধ্য আমেরিকার উদ্ভিদ।  তবে বর্তমানে এর জনপ্রিয়তা বিশ্বজুড়ে।

এতে প্রায় ২০ রকমের ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যায়। আরো আছে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট,ফাইবারসহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান। এতে সোডিয়াম ও কোন কোলেস্টেরল নেই। এমন সংমিশ্রণের ফল যেন স্বাস্থ্য রক্ষার কবজ স্বরূপ।

আরো পড়ুন: আপেল সিডার ভিনেগার এর প্রমাণিত সেরা উপকারিতা

অ্যাভোকাডোর উপকারীতা

হার্টের সুরক্ষায়

হৃদরোগ – পরিচিত এবং মারাত্মক রোগ। গত কয়েক শতকে এই রোগেই মৃত্যু ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। তাই আগে থেকেই যদি ডায়েটকে স্বাস্থ্য সমৃদ্ধ করা যায় তাহলে ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসে। এক্ষেত্রে আপনার ডায়েটকে সুস্থ হার্টের উপযোগী করে তুলবে অ্যাভোকাডো। এটি কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড এর মাত্রা কমায়। গবেষনা মতে, অ্যাভোকাডো প্রায় ২২% খারাপ কোলেস্টেরল ও ২০% ট্রাইগ্লিসারাইড হ্রাস করে। এছাড়াও হার্টের উপকারী মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটও মিলবে অ্যাভোকাডোতে।

দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে

বয়োবৃদ্ধির সাথে সাথে দৃষ্টি ক্ষমতাও হ্রাস পায়। আবার পুষ্টির অভাবে অকালে অনেকেই এমন সমস্যার সম্মুখীন হন। চোখের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে আপনিও যদি চিন্তিত হয়ে থাকেন তবে আর কিছু নয়, নিয়মিত অ্যাভোকাডো খাওয়ার অভ্যাস করুন।

এটি ছানি ও ম্যাকুলার অবক্ষয় প্রতিরোধে কাজ করে। এর ক্যারোটিনয়েডস লুটেইন ও জেক্সানথিন আপনার চোখের দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা প্রদান করবে।

ওজন হ্রাস করে

সুস্বাস্থ্যের জন্য নিয়ন্ত্রিত ওজন একান্ত কাম্য। বাড়তি ওজন মানে বাড়তি অসুখ। এই ওজন কমাতে গিয়ে হিমসিম খায় অনেকেই। কারন হল খাবারের পরিমান নিয়ন্ত্রণ। ওজন কমানোর ডায়েটে আপনাকে এমন খাবার নির্বাচন করতে হবে যা অধিক সময় আপনার পেট পরিপূর্ণ রাখে। অ্যাভোকাডো উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ যা ওজন হ্রাসে অবদান রাখে। এটি আপনার পেট দীর্ঘক্ষণ পূর্ণ রাখতে সহায়তা করে।

হাড়ের সুস্বাস্থ্যে

হাড়ের সুরক্ষায় প্রায়শই ভিটামিন কে এর প্রয়োজনীয়তা উপেক্ষা করা হয়। পর্যাপ্ত পরিমান ভিটামিন কে ক্যালসিয়াম শোষণকে বাড়ায় যা হাড়ের সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয়।

ক্যান্সার প্রতিরোধে

ক্যান্সার এর সঠিক প্রতিকার না থাকায় এর প্রতিরোধের দিকে নজর দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ফোলেট কতিপয় ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। যেমন – কোলন, পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয় ও জরায়ুর ক্যান্সার। অ্যাভোকাডোতে প্রচুর ফোলেট রয়েছে যা আপনার দেহে ক্যান্সার কোষ সৃষ্টির বিরুদ্ধে কাজ করবে। এতে বিদ্যমান কিছু ফাইটোক্যামিক্যাল ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করে।

হজমশক্তি উন্নত করে

আপনি যদি হজমের সমস্যায় ভুগে থাকেন তবে একটি অ্যাভোকাডো হাতে তুলে নিন। কারন এর উন্নত ফাইবার আপনার স্বাভাবিক হজমে সাহায্য করবে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করবে।

হতাশা দূর করে

হোমোসিস্টাইন – এমন এক পদার্থ যা আপনার মস্তিষ্কে পুষ্টির স্বাভাবিক সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত করে। এর অতিরিক্ত ক্ষরণ আপনার মেজাজ, ঘুম ও ক্ষুধায় বাজে প্রভাব ফেলে। অ্যাভোকাডোতে আছে উচ্চ মাত্রার ফোলেট যা হোমোসিস্টাইন তৈরিতে বাধা দেয়। আবার এন্টি-স্ট্রেস উপাদান ম্যাগনেসিয়াম মানসিক চাপ কমায় এবং ভালো ঘুমে সহায়তা করে।

মস্তিষ্কের সুরক্ষা নিশ্চিত করে

মস্তিষ্কের রোগ আলজাইমার যা আপনার স্মৃতি শক্তি ও চিন্তার ক্ষমতাকে ধীরে ধীরে কমিয়ে দেয়। ভিটামিন ই সমৃদ্ধ অ্যাভোকাডো আপনাকে এহেন মারাত্মক রোগ থেকে রেহাই দিতে পারে। ভিটামিন ই এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য সেল ডেমেজ প্রতিরোধ করে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে

এর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ক্রিয়া আপনার দেহের কয়েক ডজন সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। এতে ভিটামিন ই ও সি দুইটিই থাকায় এটি মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি-রেডিক্যাল প্রভাব হ্রাস করে।

এন্টি এজিং হিসেবে কাজ করে

বয়সের ছাপ এড়িয়ে চলা মুশকিল। তবে আপনার ডায়েটে যদি থাকে অ্যাভোকাডো তবে চিন্তার কোন কারণ নেই। এতে মজুত লুটেইন এবং জেক্সানথিন ত্বককে ক্ষতির থেকে রক্ষা করে এবং এজিং প্রক্রিয়াকে ধীর করে।

ত্বকের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে

আপনার সুন্দর ও গ্লোয়িং ত্বকের রহস্য হতে পারে অ্যাভোকাডো। এতে থাকা প্রচুর পরিমান ভিটামিন ও মিনারেল ত্বকের যত্ন নেয়। এর ক্যারোটিনয়েডস ত্বকের ইউভি প্রদাহ কমায়। এর বিটা ক্যারোটিন ত্বকে বিভিন্ন দীর্ঘকালীন ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

চুল ও নখের সৌন্দর্যে

চুল নিয়ে সবার আলাদা আকর্ষণ কাজ করে, বিশেষ করে মেয়েদের। তবে বর্তমানে ছেলেদের মধ্যেও চুল নিয়ে নানান উৎকন্ঠা। আবহাওয়া, পরিবেশ ও প্রতিদিনের ধূলোময়লায় চুল হয়ে উঠে রুক্ষ।

অ্যাভোকাডোতে উপস্থিত বায়োটিন  আপনার চুলের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। সাথে ভিটামিন বি ও ই চুলের শুষ্কতা দূর করে চুলকে অন্যান্য ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। চুলের পাশাপাশি এটি আপনার নখের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করবে।

সর্বোপরি, সুস্থ নিশ্চিত ও বাহ্যিক সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম অ্যাভোকাডোর বিকল্প নেই। তাই এদিক সেদিক না ভেবে আপনার রোজকার খাদ্যাভাসে যুক্ত করে নিন পুষ্টিসম্পন্ন অ্যাভোকাডো।

তথ্যসূত্রঃ MyOrganicBD

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *