তথ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিশেষ খবর

অ্যাপল কোম্পানি কি চীনের কাছে জিম্মি হয়ে রয়েছে?

ডেস্ক নিউজ, সুখবর ডটকম: অধিকাংশ আমেরিকান কোম্পানি যেখানে চীনের প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে, অ্যাপল চীনের সাথে সংযুক্ত থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। এ পরিস্থিতিতে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগছে যে, অ্যাপল কি তাহলে চীনের কাছে জিম্মি হয়ে রয়েছে?

মূলত অ্যাপলের সিইও টিম কুক চীনে প্রচুর পরিমাণে পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন এবং হুট করে তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন না। তিনি এমন কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন না যাতে করে শুধুমাত্র অ্যাপলের গ্রাহকেরাই নয় এর অংশীদাররাও বিপদে পড়ে। ফরচুন ৫০০ অ্যাপলের থেকে নিচের র‍্যাংকিংয়ে থাকা এমন অনেক আমেরিকান কোম্পানি রয়েছে যারা চীনের সাথে এখনও কাজ করতে চাইছে।

চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক এ পরিস্থিতিকে আরো খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চীনা প্রধানমন্ত্রী শি জিনপিংয়ের সাথে আলোচনায় বসতে চাইছিলেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি এতটাই অস্থিতিশীল যে শি এখন কোন ধরনের আলোচনায় বসতে রাজি নন।

জনপ্রিয় এপ টিকটক যদি না তাদের চীনা অংশীদারিত্ব থেকে সরে দাঁড়ায় তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র টিকটককে ব্যান করার হুমকি দিয়েছে।

টিকটকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাপচারিতা ভালো দিকে এগোয়নি, যার ফলশ্রুতিতে চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর বিরক্ত হয়ে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে চীনের নবনির্বাচিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী, কিন গ্যাং বলেছেন, যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনা বিরোধী কার্যক্রম থেকে সরে না দাঁড়ায় তবে দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ অবধারিত।

টিম কুক সম্প্রতি চীন সফরে যান। সেখানে তিনি বলেন যে, বিগত কয়েক দশক ধরেই অ্যাপলের সাথে চীনের সুসম্পর্ক বজায় রয়েছে এবং অ্যাপলের প্রায় সব পণ্যই চীনে নির্মিত।

তবে অন্যদিকে দেখা যাচ্ছে যে, ফক্সকন, তাইওয়ানভিত্তিক অ্যাপল কোম্পানির অংশীদার, যারা আইফোনের প্রধান পণ্য উৎপাদনকারী, তারা চীনের বাইরে বিকল্প উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। চলমান চীন-যুক্তরাষ্ট্র বিরোধের মুখে ফক্সকন চীন থেকে বহুদূরে ভারতে ৭০০০ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে নতুন উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলার চিন্তা করছে।

সরকারি আয়োজনে বক্তব্য রাখার দরুন এবং একই সাথে চীন থেকে বিগত তিনমাসে প্রায় ২৪০ কোটি ডলার আয় করার কারণে টিম কুক চীনের প্রশংসা করতে বাধ্য হয়েছিলেন বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।

অন্যদিকে অ্যাপল এখন তার উৎপাদন কেন্দ্রে বৈচিত্র্য আনতে চাইছে এবং সেজন্য এ কোম্পানি ভারত এবং ভিয়েতনামের দিকে ঝুঁকছে।

তাইওয়ানের অ্যাপল সরবরাহকারী কোম্পানি, ফক্সকন, পেগাট্রন এবং উইস্ট্রন ভারতে একাধিক কারখানা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উন্মুক্ত বাজার নীতির জন্য এটি একটি বিশাল বড় পদক্ষেপ। এর বিনিময়ে ভারত ফক্সকনকে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যেই ভারতের তামিলনাড়ুতে আইফোন তৈরির কাজ শুরু করেছে ফক্সকন।

চীনের শূন্য কোভিড নীতির ফলে বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয় অ্যাপল কোম্পানি। এ নীতির ফলে কোম্পানির বিপুল সংখ্যক শ্রমিক পালিয়ে যায় এবং প্রতিবাদের সম্মুখীন হতে হয় কোম্পানিটিকে।

টিকটক, শুল্ক ব্যবস্থা, তাইওয়ান ইস্যু – বিভিন্ন দিক দিয়ে চীনকে আক্রমণ করে চলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে অ্যাপল কোম্পানি শত ইচ্ছার সত্ত্বেও হুট করেই চীন থেকে বেরিয়ে যেতে পারছে না। গত বছরের এর উৎপাদনের ৯০ শতাংশই চীনে হয়েছে। তাই টিম কুক একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ীর মতোই চীন সফরে গিয়ে চীনের প্রশংসা করেছেন।

এমএইচডি/ আই. কে. জে /

আরো পড়ুন:

চীন-তাইওয়ানের মধ্যকার সংঘর্ষে উদ্বিগ্ন এশিয়ার অন্যান্য দেশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *