উন্নয়ন

অর্থনীতির চাকা ফের সচল হচ্ছে | বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ছে

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের গতি বাড়তে শুরু করেছে।গত জুলাই মাস শেষে বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৯৫ হাজার ২০১ কোটি ৮০ লাখ টাকা, যা গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে ৯ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি।

ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, মহামারীর ধাক্কা আস্তে আস্তে কাটতে শুরু করেছে। রেমিটেন্সের পাশাপাশি রপ্তানি আয় বাড়তে শুরু করেছে। আমদানিও বাড়ছে। প্রণোদনা তহবিল থেকে ঋণ পাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। সব মিলিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল হতে শুরু করেছে। তবে পুরোপুরি সচল হতে কত সময় লাগবে- তা এখনও নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৬১ শতাংশে নেমে এসেছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে গত দশ বছরে বেসরকারি খাতে ঋণের তথ্য পাওয়া যায়। তাতে দেখা যায়, গত জুন মাসের মত এত কম প্রবৃদ্ধি এক দশকে হয়নি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের ইতিহাসেই সর্বনিম্ন।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। গত অর্থবছরের মুদ্রানীতিতেও এই একই লক্ষ্য ধরা ছিল, বিপরীতে ঋণ বেড়েছিল ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ।

কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় সরকার এক লাখ কোটির বেশি টাকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল, সেগুলোর বাস্তবায়নে গতি আসায় বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতির গবেষক ও ব্যাংকাররা।

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক হচ্ছে বেসরকারি ঋণ। সেই ঋণ যদি না বাড়ে তাহলে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে না। আর বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান হবে না। অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হবে না। কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে না। বেশ কিছু দিন ধরে দেশে বিনিয়োগে স্থবিরতা চলছে। করোনাভাইরাসের কারণে তা আরও নাজুক হয়েছিল। এখন ভালো খবর যে, নতুন অর্থবছরের শুরুটা ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি শুরু হল। আমরা প্রত্যাশা করব, আগামী দিনগুলোতেও যেন এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত বৃহস্পতিবার যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, জুলাই মাস শেষে দেশে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ২০ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ১০ লাখ ৯৫ হাজার ২০১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সরকার নিয়েছে এক লাখ ৯৬ হাজার ৬৯৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

গত বছরের জুলাই শেষে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৫৭ হাজার ৩৫১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। যার মধ্যে বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ২ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা। আর সরকারের ঋণ ছিল এক লাখ ২৯ হাজার ৯৬২ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে চেষ্টা করছে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রণোদনা প্যাকেজের সুষ্ঠু বাস্তবায়নে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন নির্দেশনা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন পর্যন্ত শতাধিক নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল। কমানো হয়েছে নগদ জমা সংরক্ষণের হার (সিআরআর), নীতি সুদহার রেপো ও ব্যাংক রেট।

প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণসুবিধা নিয়ে যাতে ব্যবসা-বাণিজ্য যথা সময়ে শুরু করা যায়, সেজন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের ঋণ বিতরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *