অবশেষে রুবেল চলে গেলেন একা, সন্তপর্নে
অবশেষে রুবেল চলে গেলেন একা, সন্তপর্নে। বাইশ গজের লড়াকু ক্রিকেটার, কিন্তু জীবনযুদ্ধে হেরে গেলেন মরণব্যাধির কাছে। এ যুদ্ধে তার পাশে সর্বদা ছিলেন জীবনসঙ্গী ফারহানা চৈতি। সব সময় বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, মাঠের সতীর্থরাও। কিন্তু সব চেষ্টাই বৃথা গেল।
আইসিএল কাণ্ড দূরে সরিয়ে ২০১৬ সালে জাতীয় দলে ফিরেছিলেন ৮ বছর পর। নিজের জাতটা হয়তো চেনাতে পারেননি সেভাবে, কিন্তু মুনশিয়ানার পরিচয় দেখিয়েছিলেন অল্প সুযোগেই। মোশাররফ হোসেন রুবেল, বাঁ হাতি অর্থোডক্স স্পিনিং অলরাউন্ডার। কিন্তু মাঠের ছেলেটার মাঠে থাকা হলো কই ?
তিন বছর না পেরোতেই ২০১৯ সালে জানা গেলো ভয়ংকর এক রোগ বাসা বেঁধেছে শরীরে। বিপিএল চলাকালীন হোটেলেই জ্ঞান হারিয়েছিলেন একবার। কিন্তু ঘুনাক্ষরেও, কেউ টের পায়নি সবার অলক্ষ্যে তার শরীরে বড় হয়ে চলেছে এক মরণব্যধি। অবশেষে আসর শেষে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন পরিবারের চাপে। প্রথমবার প্রকাশিত হয় ক্যানসারের আবির্ভাবের কথা।
কিন্তু, আজন্ম লড়াকু একজন মানুষকে এত সহজে হারিয়ে দেবে একটা ব্যধি। তা কি করে হয়? রুবেলও হার মানেননি। কিন্তু ব্যয়বহুল এই চিকিৎসার ভার বহন করতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে পরিবার। তখনই তার পাশে এসে দাঁড়ায় ক্রিকেট বোর্ড এবং সাবেক ক্রিকেটাররা। অস্ত্রোপচার শেষে আবারো মাঠে ফিরে আসেন তিনি। ম্যাচ খেলতে না পারলেও অনুশীলনে যোগ দিয়ে জানান দেন নিজের অফুরাণ জীবনীশক্তির।
কিন্তু সবাইকে ফাঁকি দিয়ে রুবেলের দেহে আবারও ফিরে আসে ক্যানসার। করোনা মহামারির সময়, যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে বহুগুণে। হাজারো চেষ্টা, শক্ত মানসিকতার পরও বারবার হেরে যাচ্ছিলেন রুবেল। আর সঙ্গে আর্থিক অসংগতিটাও চাপে রেখেছিলো তাকে। যদিও, জীবনসঙ্গী চৈতি একা হাতেই লড়ে গেছেন পুরোটা সময়। ভালোবাসায় আগলে রেখেছিলেন রুবেলকে। বুঝতে দেন নি ভেতরে বয়ে যাওয়া প্রচণ্ড ঝড়কে।
সেসময় রুবেলের পাশে ছিলেন তার সাবেক সতীর্থরা। নিয়মিত খোঁজ রাখতেন বন্ধু মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। দুই দফায় আর্থিকভাবে সাহায্য করেছেন সাকিব আল হাসান এবং তার ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু, কারো চেষ্টাই সফল হতে দেন নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লু এবং গোল্ড মেডেলিস্ট এই ক্রীড়াবিদ।
নিজে ফিরেছিলেন তার চিরচেনা মিরপুরে, কিন্তু ২২ গজের চেনা ছন্দে নয়। সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে।