অবশেষে ইমরান খানের বিদায়
অবশেষে ইমরান খানের বিদায় হলো পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এবং নতুন প্রধানমন্ত্রীর অপেক্ষায় পাকিস্তান। পাকিস্তানের কোনো প্রধানমন্ত্রীই যেটা পারেননি, সেটা পারলেন না ইমরান খানও।
তবে পূর্বসূরীদের মতো মেয়াদ পূরণের আগে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিলেও এক জায়গায় ‘অনন্য’ ইমরান। দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অনাস্থা ভোটে হেরে বিদায় নিতে হয়েছে তাঁকে। জাতীয় পরিষদে নানা নাটকীয়তার পর শনিবার মধ্যরাতের পর ওই ভোট অনুষ্ঠিত হয়।
এখন নতুন প্রধানমন্ত্রীর অপেক্ষায় পাকিস্তান।
নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে সোমবার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। বিরোধী দলগুলো পাকিস্তান মুসলিম লিগের (পিএমএল-এন) নেতা শাহবাজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী করেছে।
এদিকে ইমরানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) কোর কমিটির সভায় জাতীয় পরিষদ থেকে পদত্যাগের পরামর্শ এসেছে। রবিবার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন সোমবার : জাতীয় পরিষদের অধিবেশন সোমবার সকাল ১১টায় শুরু হবে। এই অধিবেশনে দুপুর ২টায় নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করা হবে। বিরোধী দলগুলোর প্রার্থী হিসেবে শাহবাজ শরিফ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
শাহবাজ শরিফের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়া অনেকটাই নিশ্চিত। ৩৪২ আসনের জাতীয় পরিষদে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হতে প্রয়োজন ১৭২ আসন। ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে ভোট পড়েছিল ১৭৪টি। তার মানে প্রয়োজনের চেয়ে অন্তত দুটি ভোট বেশি আছে বিরোধীদের।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর শাহবাজ শরিফ সাংবাদিকদের বলেন, ‘জাতীয় সংহতিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে। ’ (পিএমএল-এন) নির্বাসিত নেতা ও ভাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের মামলার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শাহবাজ শরিফ বলেন, আইন অনুযায়ী সেগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শাহবাজ শরিফ তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছোট ভাই। ২০১৭ সালে দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারান নওয়াজ। এরপর দুই বছর কারাভোগ করে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্য যান তিনি। এর পর থেকে সেখানেই আছেন। ইমরান সরকারের শেষ দিকে তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের সম্মুখীন করার কথা উঠেছিল। নওয়াজের দলের (পিএমএল-এন) প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শাহবাজ। তিনি দীর্ঘদিন পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এদিকে পরাজয় নিশ্চিত জেনেও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছে ইমরানের দল। দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি পিটিআইয়ের প্রার্থী হিসেবে রবিবার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
পদত্যাগ করতে পারে পিটিআই : ইমরানের দলের নেতারা জাতীয় পরিষদ থেকে পদত্যাগ করতে পারেন। দলটির নেতা ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী জানান, রবিবার দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভায় নেতারা পদত্যাগের পক্ষে মত দেন। তিনি জানান, শাহবাজ শরিফের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে পিটিআইয়ের পক্ষ থেকে তাঁরা যথাযথ জায়গায় অভিযোগ দিয়েছেন। সেই অভিযোগ অগ্রাহ্য করে শাহবাজের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হলে সোমবার জাতীয় পরিষদের অধিবেশন শুরুর পর গণপদত্যাগ করবেন পিটিআই নেতারা।
ইসলামাবাদের বানি গালায় অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে ইমরান খানও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে নেতারা চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
এদিকে পাঞ্জাব, সিন্ধু ও খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের গভর্নররাও পদত্যাগ করতে পারেন বলে সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।
ইমরানের বিদেশ যাওয়া ঠেকাতে আবেদন : ইমরান খান ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের বিদেশে যাওয়া ঠেকাতে আদালতে আবেদন করেছেন একজন আইনজীবী। ইসলামাবাদ হাইকোর্টে করা ওই আবেদনে ইমরান, তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য ও দলের প্রধান নেতাদের বিদেশ যাওয়া ঠেকাতে তাঁদের নাম ‘এক্সিট কন্ট্রোল লিস্ট’(ইসিএল)-এ যুক্ত করার আরজি জানানো হয়েছে।
ইসলামাবাদ হাইকোর্ট সোমবার ওই আবেদন শুনানির তালিকায় রেখেছেন।
ইমরানের কর্মীর বাসায় তল্লাশি : ইমরানের ডিজিটাল মিডিয়া টিমের প্রধান আরসালান খালিদের বাসায় তল্লাশি চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে পিটিআই। এ সময় আরসালান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ফোন কেড়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এ অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পিটিআই।
স্বাধীনতার লড়াই শুরু : ইমরান খান বলেছেন, ‘পাকিস্তান ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভ করেছে, কিন্তু আজ আবার স্বাধীনতার লড়াই শুরু হলো। এই লড়াই বিদেশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সরকার পতনের বিরুদ্ধে। ’ তিনি আরো বলেন, দেশের জনগণ সব সময় সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াই করেছে।
অনাস্থা ভোটে ক্ষমতা হারানোর পর রবিবার এক টুইট বার্তায় ইমরান এসব কথা বলেন।
গত শনিবার দিনভর নাটকীয়তার শেষে রাত ১২টা বাজার কিছুক্ষণ আগে অনাস্থা ভোট দিতে রাজি হন স্পিকার আসাদ কায়সার। তবে ভোট শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ আগে পদত্যাগ করেন তিনি। পরে বিরোধী দল পিএমএলের (এন) নেতা আয়াজ সাদিক প্যানেল সভাপতি হিসেবে স্পিকারের আসনে বসেন। রাত ১২টার পর শুরু হয় অনাস্থা ভোটগ্রহণ। ভোটগ্রহণের পর আয়াজ সাদিক ফল ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, ‘অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ১৭৪ ভোট পড়েছে। এর মধ্য দিয়ে জাতীয় পরিষদে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে পাস হলো। ’ ওই ভোট শুরুর আগেই ইমরানের দল পিটিআইয়ের সদস্যরা অধিবেশনস্থল ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। সূত্র : ডন, জিও নিউজ ও এএফপি।