প্রচ্ছদ

অফিসগামীদের প্রশ্ন: গণপরিবহন নেই, কিভাবে যাব অফিসে?

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: বর্তমানে সারাদেশে চলছে সীমিত পরিসরে লকডাউন, চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত। সরকারি ও বেসরকারি অফিস খোলা রেখে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়ছেন অফিসগামীরা। প্রাতিষ্ঠানিক পরিবহনের ব্যবস্থা নেই বেশিরভাগ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের। বাসা থেকে কর্মস্থলের দূরত্বভেদে বেড়েছে দুর্ভোগ এবং  অফিসে যাওয়া-আসার অতিরিক্ত পরিবহন খরচ। কেউ কেউ পায়ে হেঁটেই অফিস করছেন। এদিকে, গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও নগরীর বিভিন্ন স্থানে যানজট ছিল বেশ দৃশ্যমান।  

২৮ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সীমিত পরিসরে লকডাউনের বিষয়ে গত ২৭ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সারাদেশে পণ্যবাহী যানবাহন ও রিকশা ছাড়া সব গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়মিত টহলের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। সব শপিংমল, মার্কেট, পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে। খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রি (শুধুমাত্র অনলাইন/টেকওয়ে) করতে পারবে। সরকারি-বেসরকারি অফিস ও প্রতিষ্ঠানসমূহে শুধু প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নিজ নিজ অফিসের ব্যবস্থাপনায় তাদের আনা-নেওয়া করতে হবে। জনসাধারণকে মাস্ক পরার জন্য আরও প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে। 

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। সরকারি ও বেসরকারি অফিস খোলা রয়েছে। সকাল ৮টার আগেই নগরীর মোড়ে মোড়ে অফিসগামী মানুষের ভিড়। গণপরিবহনের অনুপস্থিতে নগরীর পুরো মাঠ দখলে রেখেছে রিকশা, মোটর বাইক, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, সিএনজি অটোরিকশা, অ্যাম্বুলেন্স এবং পণ্যবাহী পরিবহন। এই সব পরিবহনের সংখ্যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় এই ‘লকডাউনের’ মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে।  এছাড়া রাজধানীর বেশকিছু সড়কে বেশ দীর্ঘ যানজটের চিত্রও দেখা গেছে। বিশেষ করে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার এবং শাহবাগে এসব যানযট লক্ষ করা গেছে সকালে।

মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর এই এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায় অন্যান্য সময়ের তুলনায় রাজপথে মানুষের ভিড় অনেক বেশি। বিশেষ করে অনেকেই বের হয়েছেন এবং পায়ে হেঁটে যাত্রা করেছেন ।

আজ সকাল সাড়ে ৮টায় মগবাজারে চা খাচ্ছিলেন ফজলুল মিয়া (৪২)। মতিঝিল আরামবাগে একটি বেসরকারি অফিসে কাজ করেন তিনি। প্রতিদিন মগবাজার মোড় থেকে বাসে করে তিনি অফিস করেন। তিনি ধূমকেতু ডটকমকে বলেন, গণপরিবহন বন্ধ রেখে অফিস খোলা রাখা ঠিক হচ্ছে না। আমার মত স্বল্প বেতনের কর্মচারীর পক্ষে এত দূর পথ রিকশায় করে অফিসে যাওযা-আসা করা যেমন খুব কষ্টের, তেমনি আর্থিক সামর্থ্যের বাইরে। কিছু দূর হেঁটে বাকি পথ রিকশায় যাওয়ার চিন্তা করছেন ফজলুল মিয়া।

সকাল পৌনে ৯টার  দিকে মালিবাগ এলাকার মৌচাক মার্কেটের সামনে মোটর বাইক থেকে নামলেন মো. আফজাল হোসেন (৩৩)। তিনি একটি রেষ্টুরেন্টে কাজ করেন। স্বাভাবিক দিনের তুলনায় ২৫ টাকা বাড়তি ভাড়া দিতে হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। আর পায়ে হেঁটেই শান্তিনগর এলাকা থেকে বাংলামোটরস্থ অফিসে রওনা দিয়েছেন শহিদুল ইসলাম (২৯)। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করেন। তিনি ধূমকেতু ডটকমকে জানান, তিনি প্রতিদিন বাসে করে অফিস করেন। শান্তিনগর মোড় থেকে ৬নং বাসে করে বাংলামোটর মোড়ে নেমে যান। এই লকডাউনে রিকশা বা মোটর বাইকে করে অফিসে যাওয়ার আর্থিক সামর্থ্য নেই বলে জানান শহিদুল ইসলাম।

গণপরিবহন বন্ধ থাকায় স্বাভাবিক সময়ের আধা ঘণ্টা আগে বাসা থেকে বের হয়েছেন নাসিমা বেগম (২৮)। মালিবাগ মোড়ে পৌঁছেই তিনি ফুটপাতের দোকানে চা খাচ্ছিলেন। মালিবাগের একটি ক্লিনিকে কাজ করেন জানিয়ে তিনি ধূমকেতু ডটকমকে বলেন, মধ্য বাড্ডায় পরিবার নিয়ে থাকেন। রামপুরা ব্রিজ পর্যন্ত রিকশায় আসার পর মালিবাগ পর্যন্ত হেঁটেছেন তিনি। হাঁটতে হবে জেনেই স্বাভাবিক দিনের তুলনায় আধা ঘণ্টা আগে বাসা থেকে বের হয়েছেন বলে জানিয়েছেন নাসিমা বেগম।

এভাবে পরিবহন বন্ধ রেখে অফিস খোলা রাখার কারণে নানাভাবে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন কর্মজীবীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *