শিল্প ও বাণিজ্য

অনিয়মের অভিযোগে ইসলামিক ফাইন্যান্সের এমডির পদত্যাগ


নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও প্রতিষ্ঠানের নিয়ম ভেঙে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগে ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবু জাফর মো. সালেহ পদত্যাগ করেছেন। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন সূচক ধরে তদন্ত করে। তার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ জুন পদত্যাগ করেন সালেহ।
গত বছরের ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি তদন্ত দল প্রতিষ্ঠানটিতে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়মের পাশাপাশি এর সঙ্গে সালেহ’র সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায়।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুসারে, সালেহ একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানের আভ্যন্তরীণ নীতি লঙ্ঘন করে ১০ লাখ টাকা উৎসব ভাতা নিয়েছেন।
২০১৮ সালের জুনে ইসলামিক ফাইন্যান্সে যোগ দেন সালেহ। তবে, যোগদানের ছয় মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই তিনি এই সুবিধা নেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কোনো ধরনের সাক্ষাৎকার ও মূল্যায়ণ ছাড়াই তিনি প্রতিষ্ঠানটিতে কিছু কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেন।
এমনকি বিধি অনুসারে নিয়োগ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কথা থাকলেও ইসলামিক ফাইন্যান্স কর্তৃপক্ষ তা মানেনি।
এছাড়া নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সালেহ প্রতিষ্ঠানের বোর্ড সদস্যদেরও অংশ নেওয়ার সুযোগ দেন। যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তা সত্ত্বেও, ব্যাংক-বহির্ভূত এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ সালেহর চুক্তি নবায়ন করে। তার আগের তিন বছরের মেয়াদ ৭ জুন শেষ হয়।
গত মে মাসে ইসলামিক ফাইন্যান্সের পরিচালনা পর্ষদ সালেহকে তার চলতি দায়িত্ব বহাল রাখার অনুমোদন চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অনুরোধ করে।
তবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই অনুরোধ রাখেনি। উপরন্তু তারা ইসলামিক ফাইন্যান্সকে সালেহ’র বিরুদ্ধে চলা তদন্তের পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে অবহিত করে।
সালেহকে গত ২ জুন পাঠানো এক চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদনে আসা অভিযোগগুলো সম্পর্কে জানতে চায়।
এর মধ্যেই ৭ জুন সালেহ ব্যক্তিগত কারণের জন্য পরবর্তী মেয়াদের দায়িত্ব নিতে পারছেন না জানিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
ইসলামিক ফাইন্যান্সের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন চৌধুরী গত ১৩ জুন কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পাঠানো এক চিঠিতে সালেহ’র অনিয়মের বিষয়টি তাদের অবহিত করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
ওই চিঠিতে আনোয়ার হোসেন চৌধুরী আরও উল্লেখ করেন, যেহেতু সালেহ পদত্যাগ করেছেন, তাই তিনি ইসলামিক ফাইন্যান্সকে প্রভাবিত করতে পারবেন না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিধি লঙ্ঘন করে সালেহ ৩৪ বছরের এক ব্যক্তিকে জুনিয়র অফিসার পদে নিয়োগ দেন। অথচ একজন জুনিয়র অফিসার নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্ধারিত বয়সসীমা ৩০ এর মধ্যে থাকার কথা।
সালেহ’র নিয়োগ দেওয়া আরেক জুনিয়র অফিসারের বয়সও ৩০ বছরের বেশি। স্বাভাবিকের চেয়ে উচ্চ বেতনে যার নিয়োগ হয়।
এছাড়া চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার হিসেবে সালেহ এমন এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়েছেন, যার এই পদের জন্য প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা নেই। পাশাপাশি দুই লাখ ৮৪ হাজার টাকা বেতনে তিনি মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান হিসেবে এক কর্মকর্তাকেও নিয়োগ দেন। ইসলামিক ফাইন্যান্সের আর্থিক সঙ্গতির তুলনায় যা খুবই বেশি।
একইসঙ্গে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সালেহ’র বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযোগও এনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সূত্র: দ্যা ডেইলি স্টার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *