কৃষি-মৎস্য

অনলাইনে আম বিক্রি করে ভাগ্য বদলেছে রাজশাহীর অনেক শিক্ষার্থীর

ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: বাবা ঢাকায় রিকশা চালান। ছেলে পড়েন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি)। দুই বছর পরে ছোট ছেলে ভর্তি হলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি)। এবার আর বাবা কুলিয়ে উঠতে পারেন না। দুই ভাইয়ের পড়াশোনার খরচে টান পড়ে। সংসারও চলতে চায় না। বড় ছেলে তখন টিউশনিসহ নানা কাজ করে পড়াশোনার খরচ মেটানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না। পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলো। এমন সময় এলো আমের মৌসুম। অনলাইনের মাধ্যমে আম বিক্রির ধারণা তাদের জীবন বদলে দিয়েছে।

বড় ছেলের নাম জুয়েল মামুন। তিনি পড়েন রাবিতে অর্থনীতি বিভাগে। ছোট ছেলে আলমগীর হোসেন জাবিতে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ছাত্র। বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার রতন বরিষ গ্রামে।

আম থেকে আয়

বছর তিনেক আগের কথা। সেবার আমের মৌসুমে ছিল পবিত্র রমজান মাস ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি। ফেসবুকে ‘ফ্রুট হাট’ নামে একটা পেজ খুললেন দুই ভাই। ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী সরাসরি বাগান থেকে আম সংগ্রহ করে শুরু হলো কুরিয়ারে পৌঁছে দেওয়া। প্রথম বছর প্রায় পাঁচ হাজার কেজি আম বিক্রি হয়েছিল। পরের বছর নিয়ম করলেন, আগে টাকা পাঠিয়ে বুকিং দিতে হবে। সাড়া মিলল তাতেও। বিক্রি হলো প্রায় ১৫ হাজার কেজি আম। গত বছর বিক্রি হয়েছে ৩০ হাজার কেজি। এবারও তাদের কার্যক্রম চলছে পুরোদমে। মৌসুমের শুরুতেই ৪ হাজার কেজি গোপালভোগ পাঠিয়েছেন। রাজশাহীর পুঠিয়ার বানেশ্বর আমের বাজারে দুই ভাই আরও পাঁচজন কর্মীকে নিয়ে এ কর্মযজ্ঞ চালান। কর্মীদের একজন শুধু আমের মান নিশ্চিত করেন। অন্যরা আম ওজন করা, প্যাকেট করা, কুরিয়ারে বা গাড়িতে পাঠানোর কাজ করেন। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী আম পাঠানো হয়।

জুয়েল মামুন বলেন, “করোনার কারণে গত দুই মৌসুমে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। অনেক অনিশ্চয়তার মধ্যেও আমের ব্যবসা করে আমরা সংসারের হাল ধরতে পেরেছি।” জুয়েলরা ব্যবসার আয় থেকে বাড়ির কাঁচা মেঝে পাকা করে ওপরে নতুন টিনের ছাউনি দিয়েছেন। গরুর খামার করেছেন। খামারে এখন দুটি ষাঁড় আছে। জুয়েল এখন স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়ছেন, আলমগীর দ্বিতীয় বর্ষে। চার মাস ধরে তাদের বাবাকে আর রিকশা চালাতে হয় না।

শুধু জুয়েল-আলমগীর নন

নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্সের (উই) হিসাব মতে, রাজশাহী জেলায় তাদের সঙ্গে যুক্ত ১৭৫ জন উদ্যোক্তা অনলাইনে আমের ব্যবসা করছেন। তাদের মধ্যে ১৪০ জন নারী। বেশির ভাগই শিক্ষার্থী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তারা আমের ব্যবসায় ঝুঁকেছেন।

রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ঐশী তাবাসসুম ফেসবুকে যে পেজের মাধ্যমে আম বিক্রি করেন, তার নাম ‘ম্যাংগোশাহী’। গত বছর তিনি ৩০০ কেজি গোপালভোগ ও হিমসাগর আম বিক্রি করেছেন। রাজশাহী মহিলা কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী নীপা সেনগুপ্তা স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষা দিয়েছেন। এখনো ফলাফল প্রকাশিত হয়নি। অনলাইনে ফল বিক্রির সুফল তিনি পেতে শুরু করেছেন। ৩ জুন পর্যন্ত তিনি ক্রেতাদের কাছে ১ হাজার ৬০০ কেজি আম পাঠিয়েছেন। ‘অমৃত স্বাদ’ নামে তার একটি ফেসবুক পেজ আছে।

৩ জুন বিকেলে পবা উপজেলার দোয়ারি গ্রামের হাবিবুর রহমানের আমবাগানে গিয়ে দেখা যায়, নীপা সেনগুপ্তা তার ক্রেতাদের জন্য আম বুকিংয়ের কাজ তদারক করছেন। তিনি বলেন, “ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট ও নোয়াখালীর ক্রেতাদের জন্য ৩০০ কেজি হিমসাগর আম পাঠাচ্ছি। কুরিয়ার খরচসহ এক কেজি আম ঢাকায় পাঠানোর জন্য দাম ধরা হচ্ছে ৯০ টাকা, আর ঢাকার বাইরে ৯৬ টাকা কেজি।”

রাজশাহীর অনেক শিক্ষার্থী যে যার মতো ফেসবুকে পেজ খুলে এ সময় আমের ব্যবসা শুরু করেছেন। বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. সাকি আহমেদ জানান, তার বন্ধুরা প্রায় সবাই এ বছর ফেসবুকের মাধ্যমে আম বিক্রির জন্য বিভিন্ন পেজ খুলেছেন। ইনাগাল ডটকম, কিনব ডটকম, রাজশাহীর আম, স্টোরহাউস অব ম্যাংগো— এমন আরও কত বাহারি নাম। সকল উদ্যোক্তার কাছেই হয়তো বলার মতো একটা গল্প আছে। সূত্র: প্রথম আলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *