বিশেষ খবরস্বাস্থ্য

অটিজম: শুরুতে শনাক্ত হলে আক্রান্ত শিশুকে কর্মক্ষম করে তোলা সম্ভব

নিজস্ব প্রতিবেদক, সুখবর ডটকম: অটিজম কোনো রোগ নয়, এটি মস্তিস্কের বিকাশজনিত সমস্যা। অটিজমের লক্ষণ শিশু জন্মের তিন বছরের মধ্যে দেখা দেয়। শুরুতেই অটিজমের লক্ষণ শনাক্ত হলে, তাদের চিকিৎসার মাধ্যমে কর্মক্ষম করে তোলা সম্ভব। তাই সচেতন হতে হবে পরিবারকে। শুরুতেই অটিজম শনাক্ত করার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, শিশুর জন্মের ১৮ মাসের মধ্যে অটিজম বোঝা যায়। ১৮ মাস থেকে ৩৬ মাসের মধ্যে একটি শিশু যখন অন্য শিশুর সঙ্গে মিশতে চায় না, অথবা অন্য শিশুর সঙ্গে তার আচরণের পার্থক্য থাকে। অথবা কিছু কার্যক্রম অন্য বাচ্চাদের থেকে একদম ভিন্ন হয়। এছাড়া তাদের যোগাযোগে অসুবিধা থাকে। মৌখিক বা ইশারা কোনো ভাবেই তারা যোগাযোগ স্থাপন করে না, অন্য বাচ্চারা যেমন মিলেমিশে খেলাধুলা করে সেই খেলাধুলা তারা করতে পারে না। অনেক বাচ্চার মধ্যে ছেড়ে দিলে ঐ বাচ্চা আলাদা হয়ে নিজের মতো থাকে। আর একটা হচ্ছে, অন্য বাচ্চাদের মতো তারা পুতুল নিয়ে খেলে না। তারা কাগজ দিয়ে খেলে, একই কথা বার বার বলে, তারা কখনো স্থির থাকে না। সে যেটা পছন্দ করে সেটা নিয়েই সারাক্ষণ থাকতে চায়।

অটিজমের মধ্যে তিনটা মাত্রা আছে—মৃদু মাত্রার মধ্যম মাত্রার ও অতিমাত্রা, এই তিন ধরনের অটিজম থাকতে পারে। অটিজমের বাচ্চাদের মধ্যে মেধার কোনো কমতি থাকে না। কিন্তু তাদের আচরণগত সমস্যা থাকে। এই কনসেপ্ট নিয়ে বিশ্বের সব বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। শুরুতে শনাক্ত হলে তাদের সেইমতো দ্রুত ইন্টারভেনশন দিয়ে ঐসব শিশুদের কাজে লাগানো যায়, যদি তাদের মৃদু আকারের অটিজম থাকে। এই আইডিয়া থেকে ২০১০ সালের পর থেকে সারা বিশ্বে কাজ চলছে। সেই কারণে ঐসব শিশুদের বিশেষ স্কুলে পড়িয়ে কম মেধার কাজগুলো তাদের দিয়ে করানো যায়।

সরকারের ডিজ্যাবিলিটি ইনফরমেশন সিস্টেম এর তথ্যানুসারে, দেশে বর্তমানে অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন মানুষের সংখ্যা ৭৮ হাজার ২১১ জন। তাদের মধ্যে ছেলে ৪৭ হাজার ৯১৪ জন, মেয়ে ৩০ হাজার ২৪১ জন এবং হিজরা ৫৩ জন। তবে ২০১৩ সালের জরিপে দেখা যায়, দেশে প্রতি ১০ হাজার জনে ১৫ শিশু অটিজমে আক্রান্ত। আর ২০১৭ সালের জরিপে দেখা গেছে, প্রতি ১০ হাজার জনে ১৭ জন এ রোগে আক্রান্ত। তবে দুটি জরিপেই মেয়ে শিশুর চেয়ে ছেলে শিশুর সংখ্যা বেশি এবং গ্রামাঞ্চলের চেয়ে শহরাঞ্চলে অটিজমে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।

বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু নিউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. গোপেন কুমার কুন্ডু অটিজমের কারণ হিসেবে বলেন, এটা একটা জেনেটিক অসুবিধা। যেসব বাচ্চার জেনেটিক অসুবিধা থাকে সেসব শিশু এ ধরনের সমস্যা নিয়ে জন্মায়। ১৮ মাস পরে লক্ষণগুলো আসা শুরু করে, আর সম্পূর্ণরূপে এই অসুবিধাগুলো আসে তিন বছর বয়সে। এছাড়া জেনেটিক সমস্যার সঙ্গে যদি পরিবেশগত অসুবিধা যোগ হয়, যেমন কোন পরিবেশে শিশু বড় হচ্ছে। শিশু ঘরে একা একা থাকে কি-না, বাচ্চার খেলার সাথি কম, মোবাইল ফোন বেশি দেখে, ভিটামিন ডি এর ঘাতটি থাকে, অথবা তাদের মধ্যে লেদ আর্সেনিক এর প্রভাব যদি থাকে। এসব ক্ষেত্রে অটিজমের সমস্যাগুলো আরও বাড়িয়ে দেয়। তাই আমরা বলতে পারি, জেনেটিক ও পরিবেশগত অসুবিধা অটিজমের জন্য দায়ী।

গ্রামের বাচ্চাদের চেয়ে শহরের বাচ্চাদের মধ্যে এই প্রবণতাগুলো বেশি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, গ্রামের শিশুরা অন্য শিশুদের সঙ্গে সহজে খেলার সুযোগ পায়, তাদের মোবাইল ফোনে খেলার সুযোগ কম, রেডিয়েশন আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম, ফলে গ্রামের বাচ্চাদের মধ্যে এই সমস্যা কম।

প্রতিরোধে করণীয় হিসেবে ডা. গোপেন কুমার বলেন, প্রথম সন্তানের অটিজম থাকলে পরের বাচ্চারও ৫ থেকে ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেই ক্ষেত্রে পরীক্ষানিরীক্ষা করে একটা সিদ্ধান্তে আসা যায়।

এম/

আরো পড়ুন:

ঈদে নতুন টাকা পাওয়া যাবে ব্যাংকের যেসব শাখায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *