ধূমকেতু রিপোর্ট : বগুড়া থেকে ভারত ও যুক্তরাজ্যের বাজারে পণ্য রফতানির পরিমাণ এক বছরে আড়াই গুণেরও বেশি বেড়েছে। ২০১৮ সালে ওই দুটি দেশে ৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার বা ২৮০ কোটি টাকা মূল্যের চার ধরনের পণ্য রফতানি হয়।
বগুড়া চেম্বারের সহায়তায় ৮২৩টি লেটার অব ক্রেডিটে এসব পণ্য রফতানি করা হয়েছে। আগের বছর ২০১৭ সালে রফতানি হয় সোয়া এক কোটি ডলার সমমূল্যের ১০৬ কোটি টাকার পণ্য।
চেম্বার নেতারা বলছেন, ভালো মান এবং দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় দেশের বাইরে বগুড়ায় উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা বাড়ছে।
বগুড়া চেম্বারের তথ্য অনুযায়ী, এ জেলা থেকে রফতানি করা পণ্যের তালিকায় রয়েছে- অপরিশোধিত রাইস ব্র্যান, পাটের তৈরি বস্তা ও সুতলি, সেচ পাম্প এবং তৈরি পোশাক। এসবের মধ্যে তৈরি পোশাক ছাড়া সব পণ্যের গন্তব্য ভারতের বাজারে।
আর তৈরি পোশাক রফতানি হয় যুক্তরাজ্যে। রফতানি করা পণ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রায় ৫৮ শতাংশই অপরিশোধিত রাইস ব্র্যান। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ১৬৩ কোটি। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পাটের তৈরি বস্তা, সুতা ও সুতলি। এসব পণ্যের রফতানি মূল্য ১১৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া আরও ১২ লাখ টাকার তৈরি পোশাক রফতানি করা হয়েছে।
শিল্পোদ্যোক্তারা জানান, স্বাধীনতার আগে থেকেই বগুড়ায় উৎপাদিত সাবান ও সিরামিক পণ্য রফতানি হতো। গেল শতাব্দীর সত্তর দশকের মাঝামাঝি থেকে আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে নানা কারণে রফতানিমুখী অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়।
একমাত্র সিরামিক কারখানাটি ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত চালু ছিল এবং সেখানে উৎপাদিত পণ্য তখন পর্যন্ত ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়েছে। পরে সেটিও বন্ধ হয়ে গেলে রফতানি বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়ে।
আশির দশকের মাঝামাঝি ফাউন্ড্রি শিল্পের হাত ধরে বগুড়ায় নতুন করে শিল্পায়ন শুরু হয়। ফাউন্ড্রি কারখানায় উৎপাদিত সেন্ট্রিফিউগাল পাম্প (সেচ কাজে ব্যবহারের জন্য) কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারতেও এর চাহিদা বাড়তে থাকে।
স্থানীয় কারখানাগুলোতে পরে উৎপাদন ব্যবস্থায় আধুনিকায়নের পর ২০০৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে আবার রফতানি শুরু হয়। আমলাতান্ত্রিক নানা জটিলতায় মাঝে কয়েক বছর রফতানি বন্ধ থাকার পর ২০১৬ সাল থেকে তা আবারও শুরু হয়েছে। বর্তমানে বগুড়ায় ৩৯টি ফাউন্ড্রি কারখানা রয়েছে।
একইভাবে ১৯৯৯ সালে স্থানীয় কয়েকজন উদ্যোক্তা ভারত থেকে জুট মিলের যন্ত্রাংশ এনে এ জেলায় মিল স্থাপন শুরু করেন। ২০০৪ সালে আদমজী জুট মিল বন্ধ হয়ে গেলে তার যন্ত্রাংশ সহজলভ্য হয়ে পড়লে এ জেলায় জুট মিলের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। সেই ধারাবাহিকতায় জেলায় ২৪টি জুট মিল গড়ে উঠেছে।
রাইস ব্র্যান অয়েল রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান মজুমদার প্রোডাক্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চিত্ত মজুমদার জানান, তারা ২০১৪ সাল থেকে ভারতে অপরিশোধিত রাইস ব্র্যান অয়েল রফতানি করছেন। সড়কপথে স্থলবন্দর দিয়ে তারা রফতানি করে থাকেন।
তিনি বলেন, দেশের বাজারে রাইস ব্র্যানের চাহিদা এখনও খুব বেশি নয়। সে কারণে বাইরে বিশেষ করে ভারতের বাজারে রফতানি করা হচ্ছে।
রফতানিকারক পাটকল হাসান জুট মিল ও হাসান জুট অ্যান্ড স্পিনিং মিলের স্বত্বাধিকারী এটিএম শফিকুল হাসান জুয়েল জানান, ২০০৩ সালে তারা প্রথম রফতানি শুরু করেন। সেই থেকে ক্রমেই রফতানি বাড়ছে।
তৈরি পোশাক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান বগুড়ার মুন ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী মিনহাজুল আজিজ জানান, তিনি এক সময় ইংল্যান্ডে বসবাস করতেন। পরে দেশে ফিরে তিনি তৈরি পোশাকের কারখানা দেন। তরুণ এই উদ্যোক্তা জানান, জিন্স প্যান্ট, টিশার্ট, হুডি এবং সোয়াট শার্ট তৈরি করে রফতানি করেন।
বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাছুদুর রহমান মিলন মনে করেন, এ জেলায় প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা গেলে রফতানি বাণিজ্যের পরিমাণ প্রতি বছর আরও বাড়বে এবং দুই-তিন বছরের মধ্যে তা ১০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে।