আজ আমরা জানবো কিটো ডায়েট কি এবং সুস্থ্যতায় কিটো ডায়েটের ভূমিকা । প্রথম চ্যালেজটা হচ্ছে সঠিক কিটো ডায়েট চার্ট বাছাই করা। সঠিক ডায়েট আর পরিমিত ব্যায়াম আপনাকে আপনার কাঙ্ক্ষিত শরীর পেতে সাহায্য করবে।
মোটা বেঢব শরীরে যখন পছন্দসই পোশক এখানে সেখানে বেমানান ভাবে ফুলে থাকে তখন আয়নাকে পৃথিবীর সবথেকে বড় শত্রু ভাবাটা খুব বেশি অন্যায় নয়।
নিজের আপন শরীর বেহায়া গতিতে বেড়ে আপনার সাথে যে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে তার দায় পুরোটায় সৃষ্টিকর্তার ঘাড়ে তুলে আপনার অবুঝ মনের প্রশ্ন হতেই পারে যে কেন শুধু আপনাকেই এত মোটা হতে হল? কই, তন্নতন্ন করে খুঁজেও তো আপনার খুব বেশি খাওয়ার অভ্যাসকে আপনি খুঁজে পান না।
সেই তো তিন বেলার ভাত,রুটি আর অল্প কিছু মাছ,সবজি আর মঝখানে বড়জোর একটু চা, বিস্কুট নয়ত পুড়ি,সিঙ্গারা। ব্যাস এতেই এই হাল? মাংস,তেল তো বাদ দিলেন সেই কবে থেকেই, তবে কেন উদরের এই হাল?
বাঙ্গালি ভাবনায় এতটুকুই বুঝি ঢোকে শুধু মাথায়, তবে মন দিয়ে ভাবতে বসলে দেখবেন এই মোটা, ঊর্ধ্বগতির শরীরটাকে আপনি ই অতি মমতায় দিনেদিনে গড়ে তুলেছেন।
প্রতিদিনের ভাত, ডাল, রুটি, পাস্তা, পিজ্জা, আলু, বার্গার খাবার অভ্যাস থেকেই যে আপনার এই দুর্দশা তা স্বীকার করার সময় এসেছে বন্ধু।
মোটা শরীরকে সাইজে আনার চেষ্টা আজকাল প্রবল হয়েছে, এই বোধোদয় হয়েছে মূলত্ব বিভিন্ন হার্ট, কিডনি, ডায়াবেটিকস, ক্যানসারের মত রোগের প্রকোপ থেকে।
কিটো ডায়েট কি? সুস্থ্যতায় কিটো ডায়েটের ভূমিকা
ডায়েট জগতে এখন জনপ্রিয় নাম কিটো ডায়েট, ফ্যাট থেকে কর্মশক্তি উৎপাদনই এর প্রথম কথা।
কিটো ডায়েট হচ্ছে এক ধরনের খাদ্যভ্যাস যেখানে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার যেমন, ভাত, ডাল, চিনি, দুধ ইত্যাদি এড়িয়ে চলা হয়।
এই ডায়েটের মধ্যে কার্বোহাইড্রেটের পরিবর্তে প্রোটিন এবং চর্বি জাতীয় খাবারের মাধ্যমে আমাদের দেহের প্রয়োজনীয় ক্যলোরির চাহিদা মেটানো হয়।
প্রোটিন জাতীয় খাবারের মধ্যে মুরগির মাংস, খাশির মাংস, ডিম, মাছ, পনির,অ্যাভাকাডো ও শাকসবজি খাওয়া হয়। এবং চর্বি জাতীয় খাবার হিসেবে অলিভ অয়েল বা নারকেল তেল, ক্রিম, বাদাম ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।
এই ডায়েটের প্রধান উপকারিতা হচ্ছে, এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও কেটো ডায়েট হৃদরোগ, ক্যান্সার, ও বিভিন্ন মানসিক সমস্যা হ্রাসে সহায়তা করে।
৬০ থেকে ৭৫% ক্যালরিস এই ডায়েটে আসে ফ্যাট থেকে, বাকি ১৫ থেকে ৩০% প্রোটিন এবং মাত্র ৫% থেকে ১০% ক্যালরি নিতে হয় কার্বোহাইড্রেট থেকে। ছোট সময় অনেককে দেখেছি ওজন কমাতে দুইবেলা রুটি খেতে,ভাত খেলে নাকি পেট বাড়ে।
এই জ্ঞান সেই সময় লোকের ছিল না যে ভাত এবং রুটি একই কয়েনের এপিঠ ওপিঠ মাত্র। কার্বোহাইড্রেট থেকে পাওয়া যায় গ্লুকোজ যা রক্তে মিশে শক্তিরূপে ব্যবহৃত হয়, বাড়তি গ্লুকোজ গ্লাইকোজেন হিসেবে পেশি গঠনে কাজ করে, গ্লাইকোজেন নির্দিষ্ট মাত্রা অতিক্রম করতে পারে না বলে বাকিটা গ্লোকোজ ফ্যাট হিসেবে জমা হতে থাকে।
প্রকৃতপক্ষে তেল চর্বি আর মাংস থেকে যে পরিমাণ ফ্যাট আমরা সঞ্চয় করতে পারি তার বাহুগুন বেশি ফ্যাট জমাতে পারি এই শর্করা খেয়ে। আর এই কথা আমরা কেউ অস্বীকার করতে পারব না যে আমরা বাঁচছি এই শর্করা খেয়েই।
সকালের নাস্তায় রুটি, নুডলস পাস্তা, দুপুরে পেট পুরে ভাত বিরিয়ানি, বিকেলে বিস্কিট, পুড়ি, চপ সিঙ্গারা বা বার্গার, আর রাতের ফের সেই ভাত নয়ত রুটি।
মোটকথা আমাদের জীবটা শর্করাময় আর এই অতিরিক্ত শর্করাই আমাদের দেহে ফ্যাটরূপে সদৃশ্যমান হচ্ছে যাকে আমরা ভুঁড়ি নামে অপবাদ দিই।
আর ওই যে লোকে বলত চর্বি খেলে চর্বি বাড়ে তাদের যুক্তিকে ভুল প্রমানিত করে কিটো ডায়েট বলছে এই ফ্যাট থেকেই কর্মশক্তি উৎপাদন করতে আর ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে। হ্যাঁ, বাঙ্গালীর কানে একটূ লাগলো, তাই না?
ফ্যাট খেয়ে আবার কিভাবে ফ্যাট কমায় ভাই? এই কথার উপরে একটু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হয়ে যাক তবে। হরমোন যা কিনা মোটা হবার পেছনে বড় অবদানটা রাখে সেই একটি হরমোনের নাম ইনসুলিন।
বহু কাজের ভার এই ইনসুলিনের উপর থাকলকেও প্রধান যে কাজটা যা এই ইনসুলিন মহাশয় করেন তা হচ্ছে গ্লুকোজকে রক্তের ভেতর থেকে কোষে ফ্যাটরূপে সংরক্ষণ করেন, যাতে ভবিষ্যতে যদি আমারা বাইরে থেকে শক্তি উৎপাদন করার মত কোন উৎস পেয়ে না থাকি তবে এই ফ্যাট থেকে আমরা শক্তি উৎপাদন করতে পারি।
কিন্তু আমাদের খাদ্যাভ্যাসটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে ইনসুলিন শরীরে জমা হতে হতে তার কর্মক্ষমাতা হারাতে বসেছে। অতিরিক্ত ইনসুলিনের উপস্থিতিতে আমাদের শরীরের জমে থাকা ফ্যাট পুড়তে পারে না তাই ইনসুলিন বাড়ে না এমন খাবার দিয়ে আমাদের আমাদের ডায়েট চার্ট সাজাতে হবে।
যেমন মাখন, পশু চর্বি, এক্সট্রা ভার্জিন ওয়েল, বাদাম, ডিমের কুসুম জাতীয় খাবার দেহে ইনসুলিনের পরিমাণ কমিয়ে রাখে এবং আমাদের জমাকৃত চর্বিকে পোড়াতে সাহায্য করে। অন্যদিকে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার শুধু ব্যাড ফ্যাট আর ইনসুলিনকেই বাড়ায়।
অল্প কথায় বলতে গেলে শরীরের ফ্যাট থেকে শক্তি উৎপাদন করে চলার জীবন ব্যবস্থায় কিটো ডায়েট। এই ডায়েটে সবার প্রথমে আপনার শরীরকে শর্করা থেকে শক্তি উৎপাদনের অভ্যাস থেকে মুক্ত করতে হবে
তার জন্য রোজা রাখা বা ওয়াটার ফাস্টিং খুব উপকারি। না খেয়ে থাকার ফলে প্রথমে আমাদের শরীরে জমাকৃত গ্লকোজ পুড়তে শুরু করবে তারপর গ্লাইকোজেন এবং সবশেষে তা ফ্যাট ক্ষয় করে শক্তি উৎপাদন শুরু করবে।
তবে একেবারে ডায়েটের শুরুর দিকে না খেয়ে থাকার অভ্যাস আমাদের দুর্বল করে দিতে পারে বিধায় সকালে ডিম, মাখন আর কফি বা গ্রীণ টি এর মত নাস্তা খাওয়া যেতে পারে। দুপুরে মাছ বা মাংস সাথে অল্প সিদ্ধ সবজি আর সালাদ, বিকালে বাদাম ও গ্রিন টি আর রাতে ফের মাছ, মাংস বা সবজি।
তবে সময় যত গড়াবে আপনাকে ফাস্টিং বা না খেয়ে থাকার হারটাকে বাড়াতে হবে। আপনার শরীর যখন ফ্যাট ক্ষয় করে শক্তি উৎপাদনে অভ্যস্থ হয়ে যাবে তখন ফাস্টিং হয়ে যাবে আপনার কাছে অতি স্বাচ্ছন্দেরর একটি বিষয়।
সুস্বাদু খাবার জলাঞ্জলি দিয়ে যারা ডায়েটে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন তাদের কিটো ডায়েটে ফেরার অন্যতম বড় কারণ হতে পারে এর খাদ্য তালিকা। মাংস, মাছ, ডিম, চর্বি, বাদাম,মাখন,এক্সট্রা ভার্জিন তেল, ডার্ক চকোলেট, সবজি, সালাদ সবকিছু খাওয়া যাবে এই ডায়েটে।
আভোকাডোর মত ফল খাওয়া অনুমোদিত হলেও অন্য যেকোন প্রকার ফল যাতে শর্করা আর চিনির উপস্থিতি আছে তাকে ভুলে যেতে বলা হয়েছে। আর এমন সবজি যা মাটির নিচে জন্মে বলা হয় কিটো ডায়েটে সেইটিও গ্রহণযোগ্য না। মোটকথা বাদ দিতে এমন খাবার যেগুলোর প্রধান উপাদানই কার্বোহাইড্রেট।
বর্তমানে আমাদের দেশে হাতে গোনা যেকজন ব্যক্তি কিটো ডায়েটকে উৎসাহিত করছেন তাদের মধ্যে ডাঃ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর করিন স্যার অন্যতম। তার নির্দেশিত ডায়েট প্লান আর খাবার তালিকা অনুসরণ করে অনেক মানুষ তাদের বাড়তি ওজনকে ঝড়িয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন।
ইউটিউবে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন তার অগনিত ভিডিও যা ঘরে বসে অতি অল্প খরচে আপনাকে ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে।
তবে যেহেতু এই ডায়েটে শরীরের পূর্বের যাবতীয় অব্যাসকে পরিবর্তন করে ফেলা হয় তাই শুরুর দিকে আপনার শারীরিক দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, গ্যাসের সমস্যা,মাথা ব্যাথা, দুশ্চিন্তা, ক্ষুধাভাবের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অতিরিক্ত পানি পান, অ্যাপেল সিডার ভিনেগার,গ্রীন টি, ব্লাক টি গ্রহনের মত অভ্যাসের মাধ্যমে আপনি এই সমস্যাগুলোর সমাধান করে ফেলতে পারবেন অতি সহজেই।
হেলদি লাইফ এখন শুধু আপনার সিদ্ধান্ত, মেদহীন শরীর ফিরে পেতে তাই একটি পদক্ষেপ আসুক আপনার দিক থেকে।
তো আমরা জেনে ফেল্লাম কিটো ডায়েট কি এবং সুস্থ্যতায় কিটো ডায়েটের ভূমিকা । সুতরাং বদলে ফেলুন আপনার চিরচেনা খাবার অভ্যাস আর আপন করে নিন এমন একটি জীবনাভ্যাসকে যা আমাদের আদিপুরুষরা অনুসরণ করতেন।
তথ্যসূত্রঃ MyOrganicBD