নিখিল মানখিন, ধূমকেতু ডটকম: করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে সকলের আন্তরিক সহযোগিতা দরকার বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, গত এক মাস ধরে দেশের করোনা পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি অব্যাহত রয়েছে। গণ করোনা টিকা প্রদানের পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মানা হলে দেশের করোনা পরিস্থিতি পুরোপরি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। ভুলে গেলে চলবে যে, করোনা ভাইরাস একটি সংক্রামক রোগ। সামান্য অসচেতনতার কারণে সংক্রমণের মাত্রা অস্বাভাবিক পর্যায়ে যেতেও সময় লাগবে না।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনায় দৈনিক মৃত ও শনাক্তের সংখ্যা এবং শনাক্তের হার হ্রাসের ধারাবাহিকতা গত দেড় মাস ধরে অব্যাহত রয়েছে। দৈনিক মৃতের সংখ্যা ত্রিশের নিচে এবং রোগী শনাক্তের হার চলে এসেছে চার শতাংশের নিচে। তবে স্বাস্থ্যবিধি পালন অব্যাহত রাখার উপর গুরুত্বারোপে করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
কোনো দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার বিষয়টি বুঝতে কয়েকটি মানদণ্ড ঠিক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এর মধ্যে আছে—টানা তিন সপ্তাহ ধরে মৃত্যু ও নতুন রোগী কমতে থাকা, টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় রোগী শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকা বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
এ বছরের ৮ মার্চের পর গত ২১ সেপ্টেম্বর এই প্রথম বাংলাদেশে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে কোভিড পজিটিভের হার ৫ শতাংশের নিচে নেমে আছে। ৮ মার্চ শনাক্তের হার ছিল ৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ শতাংশ। তবে এর পর থেকেই বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের হার দ্রুত বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল মৃত্যু এবং গুরুতর অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহামচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ ধূমকেতু ডটকমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের করোনা পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সময়োপযোগি উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন অব্যাহত রয়েছে। তবে ভাইরাস নিয়ে অবহেলা করা মোটেও ঠিক না। স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করার প্রতিযোগিতা বেড়ে গেলে করোনা পরিস্থিতিরও অবনতি ঘটবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ ধূমকেতু ডটকমকে বলেন, জীবন ও জীবিকার সমন্বয় ঘটিয়ে করোনার মহামারি মোকাবেলায় নানা সময়োপযোগি পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে সরকার। তিনি আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতির উন্নতির ধারা ধরে রাখতেই হবে। সারাদেশে করোনা ভ্যাকসিন প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ভ্যাকসিন কার্যক্রমের পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি পালন করা হলে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। নিজের জীবন রক্ষার বিষয়ে নিজেকেই ভাবতে হবে। প্রত্যেকে নিজের জীবন রক্ষায় সচেতন হলে করোনা সংক্রমনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে না।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর ধূমকেতু ডটকমকে জানান, যেকোন ভাইরাসের গতিবিধি সুক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং পরবর্তী পরিস্থিতি সম্পর্কে হঠাৎ করে বলে দেয়া খুব কঠিন কাজ। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত অনেক দেশের করোনা পরিস্থিতি অনেক উন্নতি ঘটেও দ্রুত অবনতি হওয়ার ঘটনা রয়েছে। বাংলাদেশের দৃশ্যমান অবস্থা দেশ ও দেশের মানুষের জন্য অনেকটা স্বস্তিদায়ক। তবে করোনা পরিস্থিতির ক্রমবর্ধমান উন্নতি ধরে রাখতে টিকার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে।
আরো পড়ুন:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনের পথে স্পুতনিক ভি টিকা: রাশিয়া