শনিবার, ডিসেম্বর ৯, ২০২৩
spot_img
Homeজাতীয়ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরছে মানুষ

ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরছে মানুষ

ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরছে মানুষ

কর্মস্থলে যোগ দিতে প্রায় একই সময়ে ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরছে মানুষ। একই সময়ে ফেরার কারণে যাত্রাপথে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের। এই ফিরতি যাত্রায় বেশি ভুগতে হচ্ছে ফেরিঘাটে। ট্রেনেও দুর্ভোগ সইতে হয়েছে অনেককে।

বাসে যাত্রীর চাপ থাকলেও তুলনামূলক কম বিড়ম্বনায় রাজধানীতে ফিরতে পারছে মানুষ। আর লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামলানোর কথা বলে ঝুঁকি নিয়ে ছেড়েছে বিভিন্ন রুটে।
গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর কল্যাণপুরে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে দেখা যায়, সেলফি পরিবহনের ১৩টি বাস পাটুরিয়া ঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে আসে।

যাত্রী নামিয়েই আবার চলে যাচ্ছে পাটুরিয়া। কথা হয় পাটুরিয়া থেকে আসা যাত্রী মো. নাদিমের সঙ্গে। তাঁর বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায়। নাদিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পাটুরিয়া ঘাটে তেমন সমস্যা নেই। তবে দৌলতদিয়া ঘাটে প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বাসের সারি। সে কারণে খোকসা থেকে লোকাল বাসে দৌলতদিয়া ঘাটে এসে ফেরিতে পার হয়ে ঢাকায় চলে এসেছি। ’

নড়াইলের যুবক সালেহ রনি ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি বলেন, ‘দুজন মিলে দুই হাজার ৩০০ টাকায় একটি মোটরসাইকেল ভাড়া করি নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলা সদর থেকে। মোটরসাইকেলেই চলে এসেছি। ’

এদিকে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে ঢাকা-কুমিল্লা রুটের তিশা প্লাস বাসের মালিক মো. আরাফাত জানান, কয়েক দিন ধরেই যাত্রী ছিল। তবে অতিরিক্ত যাত্রীর তেমন চাপ ছিল না। ঈদের পরের দিন থেকেই যাত্রীরা রাজধানীতে ঢুকেছে। রাজধানী ছেড়ে যাচ্ছে খুব কম মানুষ।

গতকাল রাজধানীর গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, দূরপাল্লার বাসে যাত্রীর সংখ্যা কম। বেশির ভাগ যাত্রীই আসছে মোটরসাইকেল ও লোকাল বাসে। যাত্রীর চাপ থাকলেও বিড়ম্বনা কম বলে জানায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

দৌলতদিয়া ঘাটে যানজটে ভোগান্তি

দৌলতদিয়া ঘাটে গতকাল ফেরি পারের অপেক্ষায় আটকা পড়ে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ রাজধানীমুখো হাজারো যানবাহন। এতে ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের রাজবাড়ী সদর থানার খানখানাপুর পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। দৌলতদিয়া ঘাটে ঈগল পরিবহন বাস কম্পানির ব্যবস্থাপক ভরত মণ্ডল বলেন, ঢাকামুখো অতিরিক্ত গাড়ির চাপে দৌলতদিয়া ঘাটে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে আটকে পড়া গাড়িগুলোর মধ্যে শুক্রবারের শতাধিক নৈশ কোচ ছিল। পরের দিন গতকাল শনিবার বিকেলে ওই কোচগুলো ফেরির নাগাল পায়।

বরিশাল থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী সাকুরা পরিবহনের একটি বাসের যাত্রী সাব্বির আহমেদ গাজীপুরে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় চাকরি করেন। তিনি বলেন, ‘রাজবাড়ী সদর থানার খানখানাপুরে পৌঁছে আমাদের বাসটি দীর্ঘ সিরিয়ালে আটকা পড়ে। টানা পাঁচ ঘণ্টা আটকে থাকার পর দুপুর আড়াইটার দিকে আমাদের গাড়ি গোয়ালন্দ ক্যানেলঘাট এলাকায় পৌঁছেছে। এখান থেকে আরো তিন কিলোমিটার দূরে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট। গাড়িটি কখন ফেরির নাগাল পাবে তা কেউ বলতে পারছে না। এদিকে গরমের মধ্যে বাসের ভেতরে আটকে থাকায় বউ-বাচ্চা নিয়ে খুব বিপদে মধ্যে আছি। ’

বিআইডাব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) প্রফুল্ল চৌহান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে বাস, ট্রাকসহ ভারী যানবাহন ফেরি পারাপার বন্ধ থাকার প্রভাবে দৌলতদিয়া ঘাটে অতিরিক্ত গাড়ির চাপ বেড়েছে। তবে ছোট-বড় ২১টি ফেরি সার্বক্ষণিক সচল রেখে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জোর চেষ্টা চলছে। ’

শিমুলিয়ায় বাসে উঠতে যাত্রীর ভিড়

মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ঘাটে গতকাল কর্মস্থল ঢাকামুখো যাত্রীর চাপ ছিল। লঞ্চ ও স্পিডবোট ঘাটে গতকাল সকাল থেকেই ঢাকামুখো যাত্রীর চাপ ছিল। ফিরতি পথে বেশির ভাগ মানুষ প্রমত্তা পদ্মা পাড়ি দিচ্ছে লঞ্চ ও স্পিডবোটে। শিমুলিয়া ঘাটে পৌঁছানোর পর বাসে উঠতে বহু মানুষকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এই সুযোগে বাসগুলো অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে যাত্রীদের থেকে। অন্যদিকে শিমুলিয়া ঘাটে ঢাকামুখো যাত্রীর চাপ থাকলেও দক্ষিণমুখো যাত্রী ও যানবাহনের কোনো চাপই ছিল না। এ কারণে শিমুলিয়া ঘাট থেকে বাংলাবাজার ও মাঝিকান্দি নৌপথে ফেরি এবং অন্যান্য নৌযান ফিরছে সামান্য কিছু যানবাহন ও যাত্রী নিয়ে। তবে অন্য প্রান্ত বাংলাবাজার ও মাঝিকান্দি ঘাট থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চ ও স্পিডবোটে যাত্রীর ব্যাপক ভিড় ছিল।

যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাংলাবাজার ঘাটে

বাংলাবাজার ঘাটে কর্মস্থলমুখো যানবাহন ও যাত্রীর উপচে পড়া ভিড় পড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে শিমুলিয়া থেকে খালি লঞ্চ, ফেরি ও স্পিডবোট আনা হয় বাংলাবাজার ঘাটে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঈদ শেষে গতকাল সকাল থেকেই শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌ রুটে যাত্রীর উপচে পড়া ভিড় শুরু হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় আরো বাড়ে। বিভিন্ন যানবাহনে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে যাত্রী বাংলাবাজার ঘাটে ভিড় করে। বাংলাবাজার ঘাট থেকে শিমুলিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি লঞ্চ ও স্পিডবোট ছিল যাত্রীতে পরিপূর্ণ। লোডমার্ক অনুযায়ী লঞ্চগুলো যাত্রী পারাপার করেছে। যাত্রীর চাপ সামাল দিতে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শিমুলিয়া ঘাট থেকে খালি লঞ্চ বাংলাবাজার ঘাটে এসে অন্তত ৯০টি ট্রিপ দেয়।

লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী

এমভি পারাবাত-১৮। নৌপরিবহন অধিদপ্তরের সার্ভে সনদ অনুযায়ী বিলাসবহুল এই লঞ্চে যাত্রী ধারণক্ষমতা এক হাজার ২৫৫ জন। কিন্তু গতকাল দুপুর গড়াতে না গড়াতেই লঞ্চে ঢাকাগামী যাত্রীতে ভরে যায়। বিকেল গড়াতে না গড়াতে লঞ্চটির লোড লাইন অতিক্রম করলেও যাত্রী তোলা হচ্ছিল।

শুধু পারাবাত-১৮ই নয়, দুই দিন ধরে বরিশাল লঞ্চ টার্মিনালে নোঙর করা প্রতিটি লঞ্চই অতিরিক্ত যাত্রী বহন করছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে যাত্রীদের কাছ থেকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআইডাব্লিউটিএর এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য বরিশালে তাঁদের কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নেই। তাই এ কাজ করার জন্য বারবার জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়।

ছাত্তার মাতবর-মঙ্গল মাঝির ঘাটে ভোগান্তি

ঈদে ফিরতি যাত্রায় শরীয়তপুরের ছাত্তার মাতবর-মঙ্গল মাঝির ঘাটে গতকাল শহরমুখো মানুষের চাপ বেড়েছে অনেকটাই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হলেও ফেরিতে ওঠার সিরিয়াল পাচ্ছে না অনেক যানবাহন।

শরীয়তপুর গোলার বাজার থেকে আসা নিলুফা বেগম বলেন, ‘অনেক সময় ধরে আটকা রয়েছি। কখন যে ফেরিতে উঠতে পারব তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছে না। আমার বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ’

মাঝপথে ইঞ্জিন বিকল, দুর্ভোগে দুই ট্রেনের যাত্রী

চট্টগ্রাম থেকে সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে আসা উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের অনতিদূরে ইঞ্জিন বিকল হয়ে আটকা পড়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে নির্ধারিত সময়ে সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছাড়তে পারেনি কালনী এক্সপ্রেস। ফলে দুই ট্রেনের যাত্রীদেরই দুর্ভোগে পড়তে হয়। গতকাল ভোর ৬টার দিকে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. নুরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, চট্টগ্রাম থেকে আসা উদয়ন এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দেওয়ায় সেটি সিলেট স্টেশনের অনতিদূরে শিববাড়ী আটকা পড়ে। এতে কালনী এক্সপ্রেসও যথাসময়ে ছাড়া সম্ভব হয়নি। পরে বিকল্প ইঞ্জিন দিয়ে সেটিকে স্টেশনে আনা হলে ৪৫ মিনিট বিলম্বে কালনী এক্সপ্রেস ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছে বরিশাল ও সিলেট অফিস এবং গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী), শিবচর (মাদারীপুর), মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুর প্রতিনিধি।]

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments