আজ জীবন সুন্দর করার দিন
কেউ মন ভেঙে দিয়েছে। কেউ প্রতারণা করেছে। কেউ ফাঁসিয়ে দিয়েছে। কেউ খুব বাজেভাবে অপমান করেছে। কেউ-বা হাসাহাসি করছে। জীবনের এই নেতিবাচক অধ্যায়ে পা পড়েনি এমন মানুষ হয়তো হাতে গোনা যাবে। প্রায় প্রত্যেকেই কোনো-না কোনো বাজে অনুভূতির মধ্য দিয়ে পার করেছেন জীবনের অনেকটা সময়। একটু যদি জানতে যাই, এমন পরিস্থিতিতে কেমন লেগেছিল? কিংবা যারা এখনও এমন কোনো পরিস্থিতিতে পড়েননি, তাদের কেমন লাগতে পারে এমন কিছু হলে? প্রতিক্রিয়াটাই বা কেমন হবে?
দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা প্রত্যেকেই মানুষ। রাগ, জেদ, হাসি, কান্না, সব থাকলেও কখনও কখনও আমাদের আবেগ প্রকাশের ক্ষেত্রে একটু লাগাম টানা লাগে। একটা বিষয়ে আমরা তখনই প্রতিক্রিয়া জানাই যখন বিষয়টা আমাদের দিকে তেড়ে আসে। এর মানে কোনোকিছুকে ব্যক্তিগতভাবে নিয়েই আমরা প্রতিক্রিয়া জানাই। যার সবটা আমাদের মনে কখনও আনন্দ দেয়, কখনও জন্ম দেয় তিক্ততার। কিছু অনুভূতি আবার আমাদের ভাবায়, কিছু অনুভূতি জন্ম দেয় রাগের। এটাও ঠিক কোনো ঘটনাকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হয়তো আমাদের নেই কিন্তু নিজেদের প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের ভারটা কিন্তু আমাদের আছে। অন্তত নিজের ভালো থাকার অধিকারটা তো আছে। ভালো থাকার কথা যেহেতু এসেই গেল, সেহেতু এই ভালো থাকাটা অবশ্যই জীবনের তাগিদেই হওয়া দরকার। অন্তত জীবনটাকে সুন্দর করার জন্য হলেও ভালো থাকা দরকার।
তারিখটা আজ জুনের ১১। দারুণ একটা দিবস আছে আজ। কী জানেন? Making Life Beautiful Day (মেকিং লাইফ বিউটিফুল ডে)। ২০১৫ সালের ১১ জুন থেকে পালিত হয়ে আসছে দিনটি। দেখুন, জীবন গঠনের পেছনে আমরা অনেকটা সময় ব্যয় করে ফেলি। এ সময়ের যাতাকলে বলতে গেলে ভুলতে বসেছি জীবন সুন্দর করার জন্যও একটু সময় প্রয়োজন।
আচ্ছা একটু ভেবে বলুন তো সৌন্দর্য কীসে? ৩০০ টাকার ওয়াটার প্রুফ কাজলে? না-কি হাতা গুটানো পাঞ্জাবিতে?
অন্তরের সৌন্দর্য নিয়ে চর্চার বালাই নেই বলেই হয়তো এ নিয়ে মাথা ঘামানোও হয় না অনেকের। ব্যস্ত দৌড়ঝাঁপ কেবল আমাদের বাহ্যিকটুকুর পরিপাটি থাকা নিয়ে।সৌন্দর্যের অনেক রূপ। একটা সুন্দর মনের মানুষ একটা সুন্দর জীবন গড়ে নিতে পারেন। হয়তো সেখানে বিলাসিতা না-ও থাকতে পারে। ঘুরাঘুরি করার অবকাশ না-ও মিলতে পারে। বন্ধুদের সাথে দেখা না-ও হতে পারে। যা পারে তা হলো, হয়তো কাউকে মন থেকে সাহায্য করা। হয়তো লোকেরা তাকে বিশ্বাসযোগ্য ভাবতে পারে। হয়তো সে মানসিক শক্তিতে এতটাই বলীয়ান যে অন্যেরা তার কাছে এলে আলো খুঁজে পান। একজন আলোকিত মানুষ নিজেও আলোতে থাকেন, চারপাশের মানুষদের মাঝেও আলো ছড়ান। এত আলোর মাখামাখিতে তাকে বাহ্যিকভাবে আর বাড়তি আলোর ব্যবস্থা করতে হয় না।
অথচ চেহারা সুন্দর দেখাতে কত কী আয়োজন আমাদের। মেইক আপ, ক্রিম বা সার্জারি। কিন্তু জীবন সুন্দরের বেলায়? ভাবতেই পারেন, একটা দিনে কি আর জীবন সুন্দর হয়? আমাদেরও একই কথা, একটা মাত্র দিন জীবন সুন্দর করতে যথেষ্ট নয় কিন্তু জীবনটা সুন্দর করা প্রয়োজন কী না এটা ভাবার জন্য ২৪ ঘন্টা কিন্তু যথেষ্ট।
আচ্ছা, আপনার চারপাশের কারও সু-খবরে কি আপনার মনে আনন্দ আসে? অন্যের খুশিতে উদযাপন করতে ইচ্ছে হয়? অথবা আরেকজনের মুখের হাসি কি আপনাকে আনন্দ দেয়? এর সবক’টির উত্তর যদি না হয় তবে আপনাকে আপনার অন্তরের সৌন্দর্যের বিষয়ে আরেকটু ভাবতে হবে। ভেতর থেকে সুন্দর ভাবনা, সুন্দর ইচ্ছেগুলো আপনার জীবনকে সুন্দর করে দেয়, এ আপনি জানেন?
আহত শরীরের চেয়ে ভয়ঙ্কর কী জানেন? আহত হ্রদয়। ভগ্ন হৃদয়ের উপশম করে দেওয়া, ক্লান্তি দূর করতে এগিয়ে আসা, ভেঙে পড়া সময়ে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করার মতো কোন মানুষের সান্নিধ্য যদি পেয়ে যান, আগলে রাখুন। এ মানুষগুলো শুধু নিজের নয় বরং চারপাশের মানুষকে সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখায়।
এমন কোন মানুষ যদি আপনার আশেপাশে থাকে তবে দোহাই আপনার, তাকে প্রয়োজনে ব্যবহার না করে যোগ্য সম্মান দিন। তাদের মূল্যায়ন করুন। যেমনটা সে করেছিল আপনার জন্য। ভালো হৃদয়ের কোন মানুষ পেলে আমরা তার কদর না করে পেয়ে বসি। কোন মানুষ যদি বুঝতে পারে তার ভালোমানুষির কারণে লোকেরা তাকে ব্যবহার করছে, সে নিজেকে গুটিয়ে নেবে বিশ্বাস করুন। আর যে মূহুর্তে ভালো মানুষগুলো নিজেকে গুটিয়ে নেয়, আমরাও দোষের খাতা খুলে বসে আরেকজনের কাছে বলে বেড়াই- ‘সে আর আগের মতো নেই!’ যুগের দোষ না মানসিকতার অধ:পতন বলা যায় একে?
একটু সময় নিন। ভুলে যান এখন কোথায় আছেন আর কী করছেন। একটু ভাবনায় ডুব দিন। বেশি না, অতি সামান্য সময় চোখ বুজে মন দিয়ে ভেবে দেখুন, আপনার জীবনে এমন সুন্দর মনের মানুষটা কে আছেন; যিনি আপনার জীবন সুন্দর করতে সাহায্য করেছেন।
এমন মানুষগুলো যদিও একটু আড়ালে থাকতে ভালোবাসে। তবে আপনি কিন্তু তাদের ব্যাপারে আপনার চারপাশকে জানাতেই পারেন। তাছাড়া বর্তমানে আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি যেখানে কেউ সামান্য কিছু করেও সেটা আগ বাড়িয়ে জানান দিয়ে নিজের নামের পরিচিতি বাড়ায়। সেখানে কেউ নীরবে কিছু করে আড়ালেই থাকছে, এমন মানুষগুলোর পরিচয় অন্তত পৃথিবীকে জানানোর দরকার আছে।
ভাগ্য সবার সমান নয়। সবাই একইরকম সুবিধা পায় না। হয়তো সৃষ্টির আদিমতম রহস্য এটাই। কারও কাছে আপনি খুবই ভাগ্যবান। আবার আপনার জানামতে আপনার চেয়েও আরও বড়ো ভাগ্যবান আছে। যারা আপনার চেয়ে কম ভাগ্যবান, তাদের পাশে কিন্তু আপনি থাকতেই পারেন, অন্তত একটু সাহস দিতে। সম্ভব হলে কাউকে ভালো কথা বলে উৎসাহ দিন। খোটা, উপহাসমূলক কথা বলার জন্য চারপাশের লোকের তো অভাব নেই।
অনেকে অনেক ধরণের চাপে থাকে। জীবনের লক্ষ্য থেকে নিভৃতে সরে যায়। এমন সময় প্রত্যেকেই পার করে জীবনে। কেউ আগে, কেউ পরে। যদি এমন কোন সময় আপনিও পার করে আসেন তাহলে মনে করে দেখুন তো কে এই সময়টায় আপনাকে উৎসাহ দিয়েছে? ধরুন কেউ দেয়নি। অথচ, আপনি আশা করেছিলেন কেউ উৎসাহ দেবে আপনাকে। এক কাজ করুন না! নিজেই অমন কেউ হয়ে উঠুন যেমনটা আপনি চেয়েছিলেন কেউ একজন এমন হয়ে আপনার কাছে ধরা দেবে। যা আপনি কারো থেকে পাননি, তা না হয় নিজেই করে উদাহরণ সৃষ্টি করে নিন। দারুণ হবে না?
তবে হ্যাঁ, সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়াটা খুব ভালো গুণ হলেও কার দিকে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন এটাও তো বোঝা লাগবে। যদি কেউ পেয়ে বসে? কিংবা আপনিই বারবার আগাবেন এই ভেবে কেউ যদি আপনাকে ব্যবহার করতে চায় তাহলে সহযোগী হওয়ার আগে আরেকবার ভাবুন।